শিরোনাম: |
হাজারীর আত্মজীবনী (পর্ব-১১০)
|
শিল্পপতিরা আমাকে পছন্দ করে না
বিদেশেও কখনো চাঁদা তুলিনি, দিয়েছি ![]() এমনকি ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস কিংবা ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসসহ নানা জাতীয় অনুষ্ঠান আমরা নিজেরাই সামর্থ্য অনুযায়ী উদযাপন করেছি। কোনো অনুষ্ঠানের চাঁদা সংগ্রহের জন্য নেতাকর্মীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম দৌড়াতে পারতেন না। অথচ আজ শিল্পপতিদের কাছে টাকার জন্য ধর্ণাটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। আমাদের দেশে একটি প্রবণতা লক্ষ করা যায় যে মফস্বল শহরের নেতারা এমন কি এমপিরা পর্যন্ত ঢাকা শহরে ওই সকল অঞ্চলের শিল্পপতিদের কাছে হাত পাতে। শহরে এসে এসব নেতারা কখনো কখনো সাহেব বিশ্রাম নিচ্ছে, মিটিংয়ে আছে, এভাবে কয়েকদিন ঘুরিয়ে হাতে কিছু গুঁজে দিলে বাড়িফিরে যায়। এ জাতীয় ব্যাপারকে আমি রাজনীতিবীদদের জন্য চরম অপমানজনক মনে করি। আমি শিল্পপতিদের কাছে যেতাম না, অধিকাংম শিল্পপতিই আমার কাছে আসত। এই কারণে আমার এলাকায় ধনী ব্যবসায়ীরা আমাকে পছন্দ করেন না। এমপি হয়েও যে লোক বড় ব্যবসায়ীদের পিয়নের সঙ্গে গিয়ে বসবে, তারা চায় সে রকম লোক নেতা হোক । নির্বাচনের খরচের জন্য কিছু টাকা সংগ্রহের পরমর্শ বালুমহল নিয়ন্ত্রকদের এবং কুতুবকে দিয়েছিলাম। সম্ভবত কিছু অর্থ ওরা সংগ্রহ করেছিল। কিন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয় সেই অর্থ পুরাটা নিয়ে কুতুব লন্ডন চলে গেলে এবং বালুমহলের সরকারী কর পরিশোধের জন্য যে অর্থ জমা হয়েছিল তার পুরোটাই বাসু মিঞা হাওলাত হিসেবে নিয়ে পরে সেগুলো আত্মসাত করে। বাসু মিঞা পেট্রোবাংলার বাড়ি বিক্রি করে চট্টগ্রামে চলে যায়। যদিও আমার নির্বাচনী ব্যয় নির্বাহের ব্যাপারে একেবারেই কোনো চিন্তা ছিলনা। কেননা প্রত্যকবারই আত্মীয়-স্বজন, দলীয় ব্যবসায়ীরা আপনা থেকেই টাকা পয়সা যোগার করে দিত। প্রতিবারই নির্বাচন শেষে দেখা গেছে, নির্বাচনের যে অর্থ হাতে এসেছে সেই টাকার কিছু অংশ রয়ে গেছে। ২০০১ সালে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত এলাকায় থাকলে মনে হয় কয়েক কোটি টাকা জমা হতো। ২০০০ ও ২০০১ সালে লন্ডন, দুবাই, ওমান, সিঙ্গাপুরসহ আরও কিছু দেশ সফর করেছি। এই সফরকালে ওখানকার লোকজন এবং আওয়ামী লীগ কমিটি থেকে অর্থ পাঠানোর আশ্বাস দিয়েছিল। যদিও আমি আমেরিকা এবং জাপান সফর করিনি। ওই দুটো দেশ থেকেও অর্থ পাঠাবার আশ্বাস দিয়েছিল। সবচাইতে বড় যোগান দিত যারা যাদেরকে আমি সৌদি আরব ও দুবাইসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পাঠিয়েছি। সরাসরি আমার সহযোগিতায় কমপক্ষে ৫ হাজার লোক বিদেশে গেছে। এদের মধ্যে রিয়াদে আমার নামেই একটি সংগঠন তৈরি করেছে। তারা খুবই সংগঠিত অবস্থায় আছে। এই সংগঠনে প্রায় দুই হাজার সদস্য আছে। জহিরের ভাই শাহ আলম প্রথমে এদের সংগঠিত করে। যদিও এখন সে ফ্রান্স চলে গেছে কিন্তু অন্যরা প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রক্ষা করে। সুতরাং নির্বাচনের ব্যয়ের জন্য আমি কখনই চিন্তিত ছিলাম না। রাজনৈতিক নেতার বিদেশে সফরে গেলে সেখানে নেতার প্রথমেই মনে করে নেতা চাঁদা সংগ্রহ করতে এসেছে। আমি লন্ডন ও দুবাই গিয়েছিলাম তখন একপর্যায়ে শুনেছিলাম আমার জন্য অর্থ সংগ্রহ করা হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে দুটি সংবর্ধনা সভায় পরিষ্কার ঘোষণা দিয়ে বলেছিলাম আমি এখানে চাঁদা তুলতে আসিনি, আমি আরও বলেছিলাম কল্যাণমুখী কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন হলে আমি তাতে অর্থ যোগান দিতে রাজি আছি। এই ঘোষণা শুনে অনেকেই অবাক হয়েছিল। তবে কেউ আমার কাছে টাকা চায়নি। কেবল ওমানে আমি যে স্কুলটি উদ্বোধন করেছিলাম তার মাইক্রোবাস কেনার জন্য প্রথমেই দুই কিস্তিতে ২ হাজার ডলার দিয়েছিলাম। তবে এসব জায়গা থেকে অনেকেই যে মূল্যবান উপহার সামগ্রী প্রদান করেছিল তার কিছু কিছু সঙ্গে এনেছিলাম। আমার জন্মদাতা পিতা একসময় নিজের মাথায় করে তরকারি নিয়ে বাজারে বিক্রি করতো। এই কথা বলতে আমি যেমন কিছুমাত্র লজ্জাবোধ করি না, তেমনি আবার আমার জন্মের কিছুদিন আগে থেকে কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়ে গিয়েছিল এ কথা বলতেও খুব গর্ববোধ করি না। আব্বা মৃত্যুর আগেই আমাদের ভাইবোনদের মাঝে সকল সম্পত্তি ভাগ বাটোয়ারা করে দিয়ে গেছেন। যদিও আমার কর্মকাণ্ড আব্বাকে শেষ জীবনে অনেক টেনশনে রেখেছিল তবু সবাই বলে আব্বা আমাকেই তার সম্পত্তির ভাগ একটু বেশি দিয়েছিলেন। মনে হয় এতে বাস্তবতা আছে। তবে আমার ভাইবোনদের কেউ এ ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এমনটি শুনিনি। এমনও হতে পারে তারা মনে করে আমারগুলোতো তাদেরই হবে। যেহেতু আমার কোনো স্ত্রী পুত্র নেই। আব্বা ছাড়াও আমার ভাইবোনরা নিজেরাই তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসার ঘটিয়ে আর্থিকভাবে অনেকটাই প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। |