শিরোনাম: |
নিকটাত্মীয়, বন্ধু ও পরিচিতদের মাধ্যমে উগ্রবাদে অনুপ্রাণিত তারা
হাজারিকা অনলাইন ডেস্ক
|
![]() সোমবার (৫ ডিসেম্বর) দুপুরে কাওরান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, ৪ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও ও রাজধানীর গুলিস্তান এলাকা থেকে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র পাঁচ জন সদস্য (গোলাম সারোয়ার, সাকিব মাহমুদ, ফরহাদ হোসেন, মুরাদ হোসেন, ওয়াসিকুর রহমান ওরফে নাঈম)’কে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় উদ্ধার করা হয় বিভিন্ন উগ্রবাদী বই ও লিফলেট। গ্রেপ্তারকৃতরা ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র দাওয়াতি, হিজরকৃত সদস্যদের প্রশিক্ষণ ও তত্ত্বাবধান, পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণ পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহসহ অন্যান্য সাংগঠনিক কার্যক্রমের সাথে জড়িত। দুই থেকে চার বছর আগে নিকটাত্মীয়, বন্ধু ও স্থানীয় পরিচিত ব্যক্তির মাধ্যমে উগ্রবাদে অনুপ্রাণিত হয়ে সংগঠনের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের মাধ্যমে তাত্ত্বিক, শারীরিক প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। সম্প্রতি জামাতুল আনসারের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানের কারণে তারা ছদ্মবেশে আত্মগোপনে থাকে। সংগঠনের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় অর্থ ও অন্যান্য সামগ্রী সংগ্রহ করে বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দিতো। মিষ্টির দোকানে কাজ করত গোলাম সারোয়ার গোলাম সারোয়ার স্থানীয় একটি মাদ্রাসা থেকে ফাজিল সম্পন্ন করে। সে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে একটি মিষ্টির দোকানে কাজ করত। সে গ্রেপ্তারকৃত নেয়ামত উল্লাহর মেয়ের জামাতা। শ্বশুরের মাধ্যমে দুই বছর আগে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়। তথাকথিত হিজরতের উদ্দেশে বের হওয়া তরুণদের কুমিল্লার বিভিন্ন সেইফ হাউজে রাখা ও পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণের উদ্দেশে প্রেরণ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমের সাথে সে জড়িত ছিল। বিভিন্ন সেইফ হাউজে অবস্থান করা হিজরতকারীদের শারীরিক ও তাত্ত্বিক বিষয়ক প্রশিক্ষণ দিত। এ ছাড়াও, সে তথাকথিত হিজরতকৃত সদস্যদের বিভিন্ন সেইফ হাউজে পৌঁছে দিত। সংগঠনের দাওয়াতি কার্যক্রমের সাথেও জড়িত ছিল সারোয়ার। কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ ৩ তরুণের (নেহাল, আসমানি ও নিলয়) ঘটনায় কুমিল্লার দৌলতগঞ্জ রেলস্টেশনের নিকটবর্তী সিসিটিভি ফুটেজে সারওয়ারকে নিখোঁজদের কুমিল্লার দিকে নিয়ে যেতে দেখা যায়। সশস্ত্র প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সদস্য সাকিব সাকিব মাহমুদ গাইবান্ধা থেকে মাধ্যমিক সম্পন্ন করে। সে একটি টেলিকম প্রতিষ্ঠানে মার্কেটিংয়ের কাজ করত। ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র শুরা সদস্য, উপদেষ্টা ও প্রশিক্ষণের তত্ত্বাবধায়ক শামীম মাহফুজের আপন ভাতিজা। সে ৩ বছর আগে শামীম মাহফুজের মাধ্যমে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ সংগঠনে যোগদান করে। গাইবান্ধা অঞ্চলে সংগঠনের দাওয়াতি কার্যক্রমের সাথে জড়িত ছিল সাকিব। এ ছাড়াও, সে শামীম মাহফুজের নির্দেশনায় গাইবান্ধা অঞ্চলে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র আদর্শে উদ্বুদ্ধ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রশিক্ষণের উদ্দেশে প্রেরণ কার্যক্রমের সাথেও জড়িত ছিল। সংগঠনের একজন সশস্ত্র প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সদস্য সাকিব। গাইবান্ধায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একজন সদস্য ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে কটূক্তি করায় সংগঠনের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনায় সে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আরও ৩-৪ জন সদস্যকে একত্রিত করে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগেই সাকিবকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেপ্তার করে। তার বিরুদ্ধে ২০২০ সালে গাইবান্ধা সদর থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা রয়েছে। ফরহাদ-মুরাদ সহোদর ভাই ফরহাদ হোসেন ও মুরাদ হোসেন সহোদর ভাই। ফরহাদ স্থানীয় কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে এবং মুরাদ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করে। তারা ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ সংগঠনের সূরা সদস্য এবং অর্থ ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান মোশারফ হোসেন ওরফে রাকিবের শ্যালক। তিন বছর আগে মোশারফ হোসেনের মাধ্যমে তারা সংগঠনের সাথে জড়িত হয়। তারা রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় সংগঠনের অর্থ দিয়ে ‘ট্রাস্ট টেলিকম’ নামে একটি মোবাইল এক্সোসরিজের দোকান পরিচালনা করত। দোকানের লভ্যাংশ সংগঠনের প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য সাংগঠনিক কার্যক্রমে ব্যয় করত। এ ছাড়াও, মুন্সিগঞ্জে তারা একটি গরু-ছাগলের খামার পরিচালনা করত। সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন সময়ে তাদের খামারে গিয়ে মিটিং করত। তারা পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণের জন্য প্রথম পর্যায়ে ১২ জন সদস্যকে পাঠায়। খামারে সবাইকে একত্রিত করে জানায়। পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণ পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী, বস্ত্র, নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্যান্য দ্রব্যাদি এবং বোমা তৈরির জন্য কতিপয় সামগ্রী ফরহাদ ও মুরাদ সংগ্রহ করত। পরবর্তীতে সামগ্রী মগবাজারে গ্রেপ্তারকৃত ওয়াসিকুর রহমান নাঈমের কাছে পৌঁছে দিত। সংগঠনের অর্থে দোকান চালাতো নাঈম রাজধানীর একটি মাদ্রাসা থেকে হিফজ সম্পন্ন করে নাঈম। দুই বছর আগে সে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ সংগঠনের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়। রাজধানীর মগবাজার এলাকায় সংগঠনের অর্থ দিয়ে ‘ষোল আনা’ নামক একটি আতরের দোকান পরিচালনা করত। দোকানের লভ্যাংশ সংগঠনের প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য সাংগঠনিক কার্যক্রমে ব্যয় করত। সে সংগঠনের দাওয়াতি কার্যক্রম ও পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহের কার্যক্রমের সাথে জড়িত ছিল। গ্রেপ্তার ফরহাদ ও মুরাদ পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি, বস্ত্র সামগ্রী ও বোমা তৈরির বিভিন্ন উপকরণ সংগ্রহ করে নাঈমের আতরের দোকানে পৌঁছে দিত। পরবর্তীতে সে বিভিন্ন মাধ্যমে তা পার্বত্য অঞ্চলে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করতো। |