শুক্রবার, ২৯ মার্চ, 2০২4
কিডনির অবৈধ ব্যবসা, গড়েছেন নয়তলা বাড়ি
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক,
Published : Wednesday, 20 July, 2022 at 10:28 PM

শহিদুল ইসলাম মিঠু। একসময় আক্রান্ত হন কিডনি রোগে। সেবা নিতে যান পার্শ্ববর্তী দেশে। সেখানে কিডনি প্রতিস্থাপনে রোগীদের ব্যাপক চাহিদা দেখেন। এরপরই জড়িয়ে পড়েন অবৈধ কিডনি ব্যবসায়। গেল ছয় বছরে প্রায় শতাধিক সাধারণ মানুষকে ডোনার হিসেবে ভারতে নিয়ে গেছেন। কিডনি প্রতিস্থাপন প্রত্যাশীর কাছ থেকে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা নিতেন। আর কিডনি দানকারীর সঙ্গে চুক্তি করতেন ছয় লাখ টাকা।

প্রথমে দুই লাখ টাকা দেওয়া হলেও চুক্তির বাকি টাকা দিতে নানান গড়িমসি করতেন। অবৈধভাবে কিডনি ব্যবসার মাধ্যমে শহিদুল রাজধানীর মিরপুরে নয়তলা বাড়ি ও অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন।

মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত রাজধানীতে পৃথক অভিযান চালিয়ে অবৈধ কিডনি বেচা-কেনা চক্রের মূলহোতাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-১। পরে বুধবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক আবদুল্লাহ আল মোমেন।

গ্রেপ্তাতরা হলেন, চক্রের হোতা শহিদুল ইসলাম মিঠু, মিজানুর রহমান, আল মামুন ওরফে মেহেদী, সাইমন ও রাসেল হোসেন। এসময় কিডনি ক্রয়-বিক্রয় চক্রের সদস্যদের কাছ থেকে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে চুক্তির এফিডেভিট কপি, ভুক্তভোগীদের পাসপোর্টসহ মোট ১৪টি পাসপোর্ট, কিডনি ক্রস ম্যাচিংয়ের বিভিন্ন দলিলাদি, দেশি ও বিদেশি মুদ্রা, বিভিন্ন ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র ও ফটোকপি, বিভিন্ন ব্যাংকের চেকবই ও এটিএম কার্ড, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের জাল সিলমোহর, খালি স্ট্যাম্প, সিপিইউ, মোবাইল ও সিম কার্ড উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক আবদুল্লাহ আল মোমেন জানান, গ্রেপ্তার মিঠু ফ্যাটি লিভারের চিকিৎসা করাতে প্রতিবেশী দেশ ভারতে যান। সেখানে গিয়ে দেখতে পান কিডনির চাহিদা। দেশে ফিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গড়ে তোলেন কিডনি পাচারকারী চক্র। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে অর্থের লোভ দেখিয়ে কিডনি ডোনারদের প্রথমে নিয়ে আসতেন ঢাকায়। কিডনি রোগীর আত্মীয় সাজিয়ে সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাদের পাঠানো হতো ভারতে। সেখানে কিডনি প্রতিস্থাপন শেষে দেশে ফিরে টাকা চাইলেই দেওয়া হতো হুমকি।

আবদুল্লাহ আল মোমেন জানান, প্রতারণার মাধ্যমে মানবদেহের কিডনিসহ বিভিন্ন অঙ্গের অবৈধ ট্রান্সপ্লান্টেশনের সঙ্গে সক্রিয় রয়েছে কয়েকটি চক্র। এসব চক্রের ফাঁদে প্রলুব্ধ হয়ে অসহায় ও নিম্ন আয়ের মানুষ এবং ক্ষেত্র বিশেষে গ্রাহকরাও প্রতারিত হচ্ছেন। আইন বহির্ভূত, স্পর্শকাতর ও অবৈধ ট্রান্সপ্লান্টেশনের এ কাজে চক্রের সদস্যরা অর্থের লোভে অমানবিক কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছে।

র‍্যাবের এ কর্মকর্তা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে র‍্যাব সাইবার মনিটরিং সেল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অবৈধভাবে কিডনিসহ অন্যান্য মানব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বেচা-কেনা সিন্ডিকেটের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে আসছিল। এসব সিন্ডিকেটের সদস্যরা অনলাইনে বিভিন্ন প্রচারণার মাধ্যমে গ্রাহক ও ডোনারদের আকৃষ্ট করে থাকে।

র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক জানান, ‘গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিডনি কেনা-বেচা চক্রের মোট সদস্য সংখ্যা ১৫ থেকে ২০ জন। তারা মূলত তিনটি ভাগে বিভক্ত হয়ে কিডনি ক্রয়-বিক্রয়ের অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। এ চক্রের সদস্যরা পার্শ্ববর্তী দেশে অবস্থানরত কিডনি কেনা-বেচা চক্রের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রায় শতাধিক মানুষকে পাচার করেছে।

মোমেন জানান, চক্রের প্রথম গ্রুপ ঢাকায় অবস্থান করে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন প্রয়োজন’ এমন বিত্তশালী রোগীদের খুঁজে বের করে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে। চক্রের দ্বিতীয় দলটি প্রথম দলের চাহিদা অনুযায়ী দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গরিব ও অভাবী মানুষদের চিহ্নিত করে এবং তাদের অর্থনৈতিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অর্থের বিনিময়ে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের জন্য ডোনার হতে প্রলুব্ধ করে ঢাকায় নিয়ে আসে। আর তৃতীয় অন্য একটি গ্রুপ প্রলোভনের শিকার ভুক্তভোগী কিডনি ডোনারদের ঢাকায় বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন প্রত্যাশী রোগীর সঙ্গে ব্লাড ম্যাচিং এবং অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করে।

আবদুল্লাহ আল মোমেন জানান, ‘ব্লাড ম্যাচিং ও অন্যান্য ডায়াগনস্টিক টেস্টে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের উপযুক্ততা নিশ্চিত হলে তার পাসপোর্ট, ভিসা প্রসেসিং এবং ভুয়া কাগজপত্র তৈরির মাধ্যমে ভুক্তভোগী ডোনারকে পার্শ্ববর্তী দেশে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করে। ওই চক্রের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী দেশে অবস্থানকারী আরেকটি চক্র পারস্পরিক যোগসাজশে ভুক্তভোগী কিডনি ডোনারকে এয়ারপোর্ট অথবা স্থলবন্দরে রিসিভ করা থেকে শুরু করে হাসপাতালের ডকুমেন্টেশন, অস্ত্রোপচারসহ যাবতীয় কার্যক্রম শেষে ভিকটিমদের বৈধ বা অবৈধ উপায়ে উত্তর পূর্বাঞ্চলের সীমান্ত এলাকা দিয়ে দেশে ফেরত পাঠায়।’

র‌্যাবের অধিনায়ক আরও জানান, গ্রেপ্তাররা এ চক্রের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ অবৈধ উপায়ে হাতিয়ে নিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে। প্রতিটি কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য তারা রোগী প্রতি ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা গ্রহণ করতো। বিপরীতে তারা কিডনি ডোনারকে মাত্র চার থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা দেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করে এবং অগ্রিম দুই লাখ টাকা প্রদান করতো। কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের পর প্রলোভনের শিকার কিডনিদাতাদের প্রতিশ্রুত অর্থ না দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করতো।

বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, চক্রের মূল হোতা ও অন্যতম আসামি মো. শহিদুল ইসলাম মিঠু ২০১৬ সালে নিজের চিকিৎসার জন্য পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে গিয়ে কিডনি প্রতিস্থাপনের রোগীর চাহিদা দেখে এ অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা শুরু করেন। সে দেশে অবস্থানরত কিডনি ক্রয়-বিক্রয় চক্রের সঙ্গে যোগসাজশে তিনি সেখানে একটি দালাল চক্র প্রতিষ্ঠা করেন। এখন পর্যন্ত তার মাধ্যমে ৫০-এর অধিক কিডনি ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে মর্মে তিনি প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছেন।

গ্রেপ্তার মিজানুর রহমান ১০ বছরের অধিক সময় ধরে এ কাজ করে আসছেন। সাইমন গত এক বছর আগে ও আল মামুন ছয় মাস আগে চক্রটির মাধ্যমে জনপ্রতি চার লাখ টাকায় কিডনি বিক্রি করেন। পরে দ্রুত সময়ে অধিক অর্থ উপার্জনের লোভে তারা এ চক্রটির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। কিডনি ডোনার ও ক্রেতা সংগ্রহে নামেন। তারা নিজেদের সুস্থতার প্রমাণ দেখিয়ে অন্যান্য ডোনারদের কিডনি বিক্রিতে আগ্রহী করতেন। এখন পর্যন্ত তারা ১০ জনের কিডনি ক্রয়-বিক্রয় করেছেন বলে জানা যায়। এছাড়া গ্রেপ্তার রাসেল হোসেন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে টাকার প্রলোভন দেখিয়ে সম্ভাব্য ডোনারদের সংগ্রহ করতেন।


সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল হাজারী।   ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: গোলাম কিবরীয়া হাজারী বিটু্।   প্রকাশক: মোঃ ইব্রাহিম পাটোয়ারী।
সহ সম্পাদক- রুবেল হাসান: ০১৮৩২৯৯২৪১২।  বার্তা সম্পাদক : জসীম উদ্দিন : ০১৭২৪১২৭৫১৬।  সার্কুলেশন ম্যানেজার : আরিফ হোসেন জয়, মোবাইল ঃ ০১৮৪০০৯৮৫২১।  রিপোর্টার: ইফাত হোসেন চৌধুরী: ০১৬৭৭১৫০২৮৭।  রিপোর্টার: নাসির উদ্দিন হাজারী পিটু: ০১৯৭৮৭৬৯৭৪৭।  মফস্বল সম্পাদক: রাসেল: মোবা:০১৭১১০৩২২৪৭   প্রকাশক কর্তৃক ফ্ল্যাট নং- এস-১, জেএমসি টাওয়ার, বাড়ি নং-১৮, রোড নং-১৩ (নতুন), সোবহানবাগ, ধানমন্ডি, ঢাকা থেকে প্রকাশিত এবং সিটি প্রেস, ইত্তেফাক ভবন, ১/আর কে মিশন রোড, ঢাকা-১২০৩ থেকে মুদ্রিত।  বার্তা, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ০২-৪১০২০০৬৪।  ই-মেইল : [email protected], web : www.hazarikapratidin.com
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি