শুক্রবার, ২৯ মার্চ, 2০২4
বাংলাদেশে আটকেপড়া ১০ হাজার ভারতীয়র চরম দুর্ভোগ
হাজারিকা অনলাইন ডেস্ক
Published : Friday, 10 July, 2020 at 4:25 PM

রাজশাহীসহ দেশের উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় আটকেপড়া ১০ হাজারের বেশি ভারতীয় নাগরিক দেশে ফিরতে না পেরে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। তারা ভারতে লকডাউন শুরুর আগেই বাংলাদেশে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন।
ইমিগ্রেশন বন্ধ থাকায় তারা গত চার মাসের বেশি সময় বাংলাদেশের রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলায় আটকে রয়েছেন। তাদের সবাই ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা।

দেশে ফিরতে চাইলেও এখন কোনো পথ পাচ্ছেন না। ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন থেকেও এই কয়েক মাসে তাদের দেশে প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে কোনো সহযোগিতা দেয়া হয়নি। জানা গেছে, গত ৬ জুন থেকে ভারত-বাংলাদেশের অধিকাংশ স্থলবন্দর খুলে দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য স্বাভাবিকভাবে চললেও লোক চলাচল এখনও বন্ধ রাখা হয়েছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার কালিয়াচক থানার গোলাপগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা সমেনা বিবি। খালার আকস্মিক মৃত্যুর খবর পেয়ে গত ৭ মার্চ এসেছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাটের আত্মীয় বাড়িতে।

করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ায় আকস্মিকভাবে সব ইমিগ্রেশন পথ বন্ধ হওয়ায় সমেনা বিবি আর ভারতে ফিরতে পারেননি। স্বামী, ছেলেমেয়ে সংসার রেখে আসা সমেনা বিবির দিন যেন কাটছে না। তার কাছে টাকা-পয়সাও নেই। ওষুধপত্র নেই। দেশে ফিরতে সমেনার আকুতি যেন শেষ হতে চায় না।
সমেনার উদ্বেগ, দেশে ফিরতে না পারলে স্বামী আরেকটা বিয়ে করার হুমকি দিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনা বিপর্যয়ের মধ্যে শিবগঞ্জ এলাকাতেই তিন শতাধিক ভারতীয় নাগরিক আটকে আছেন। গত ৮ জুলাই তারা শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে গিয়ে দেশে ফিরতে সহায়তা চেয়েছেন।

পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার বৈঞ্চবনগর থানার গুলজারনগর এলাকার আবদুর রাজ্জাক এসেছিলেন বাংলাদেশের ভোলাহাটের এক আত্মীয় বাড়িতে। ভিসার মেয়াদ আগেই শেষ হয়েছে। সীমান্ত খোলার অপেক্ষায় কেটে গেছে চার মাস। ভারতে স্ত্রী ছেলেমেয়ে ভীষণ অর্থকষ্টে দিনযাপন করছে। ঢাকা-কলকাতা বিমানের টিকিট নেয়ার পর সেই ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। এখন কোনোভাবেই ফিরতে পারছেন না।
গত ৮ মার্চ পরিবারের সঙ্গে বাংলাদেশে এসেছিলেন নবম শ্রেণির ছাত্রী নুর নেসা। পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার সূর্যাপুরে বাড়ি। চার মাস আটকে থাকায় পড়ালেখার ভীষণ ক্ষতি হচ্ছে নুর নেসার। দেশে ফুফু মারা গেলেও যেতে পারেনি। বাংলাদেশেও গরিব আত্মীয় বাড়িতে দুবেলা খাবার জুটছে না।

পশ্চিমবঙ্গের মালদার সুজাপুর চামাগ্রাম এলাকায় আটকেপড়া আহসান আলীর অবস্থা আরও খারাপ। দিনমজুরি করে সংসার চালান। চার মাস বাংলাদেশে আটকে থাকায় দেশে ছেলেমেয়েরা উপোস করে থাকছে। খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, বাংলাদেশে এসে দেশে ফিরতে না পেরে রাজশাহীর গোদাগাড়ী, চারঘাট, নওগাঁ, নাটোর এলাকায় প্রায় তিন হাজারের বেশি ভারতীয় নাগরিক আটকে রয়েছেন। ভারতে লকডাউন চলায় ইমিগ্রেশন পথ না খোলায় তারা চরম দুর্ভোগের মধ্যে আটকে আছেন। বাংলাদেশে বিভিন্ন সরকারি দফতরে যোগাযোগ করলেও তারাও কিছু করতে পারছেন না। একইভাবে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় প্রায় সাত হাজারের বেশি ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশে এসে আর ফিরতে পারেননি ভারতে করোনার প্রকোপে চলা অব্যাহত লকডাউনের কারণে। ভারতেও তারা বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করেছেন, তাদের ফেরত নেয়ার জন্য। কিন্তু সেখান থেকেও কোনো আশ্বাস পাননি।

আটকেপড়া ভারতীয় নাগরিকদের দেশে ফেরার বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক এজেডএম নুরুল হক বলেন, সমস্যাটা আমাদের দেশের না। আমরা তাদের ফেরত পাঠানোর জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষকে যথাসময়ে অবহিত করেছি।
ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তাদের দেশে ফেরার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানালে আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করব বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

আটকেপড়া ভারতীয়দের দেশে ফেরার বিষয়ে ভারতের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনের ডেপুটি হাইকমিশনার বিশ্বদীপ দে বলেন, বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনার কারণে আটকেপড়া ভারতীয়দের দেশে ফেরাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘বন্দে ভারত মিশন’ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রথমে বাংলাদেশ থেকে শুধু বিমানযোগে আটকেপড়া ভারতীয় নাগরিকদের দেশে ফেরানো হলেও এখন দুটি স্থলসীমান্ত পথ হরিদাসপুর পেট্টাপোল-বেনাপোল ও ফুলবাড়ি-বাংলাবন্ধা (পঞ্চগড়) পথে প্রত্যাবর্তনের পরিকল্পনা করছে। ভারতীয় হাইকমিশনের ওয়েবসাইটে নির্দিষ্ট লিংক দেয়া হয়েছে। এই লিংকে আটকেপড়া ভারতীয়রা নিজেদের নাম-ঠিকানা, ফোন নম্বর ও ভ্রমণসংক্রান্ত সব তথ্য দিয়ে রেজিস্ট্রেসন করতে পারবেন। ভারতে প্রত্যাবর্তনের জন্য শুধু নিবন্ধিতরাই বিবেচিত হবেন। দ্রুত তাদের দেশে ফেরানোর দিনক্ষণ ঘোষণা করা হবে বলেও জানান হাইকমিশনের এ কর্মকর্তা। তবে ভারতে ফেরার পর তাদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে বলেও জানান তিনি।



সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল হাজারী।   ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: গোলাম কিবরীয়া হাজারী বিটু্।   প্রকাশক: মোঃ ইব্রাহিম পাটোয়ারী।
সহ সম্পাদক- রুবেল হাসান: ০১৮৩২৯৯২৪১২।  বার্তা সম্পাদক : জসীম উদ্দিন : ০১৭২৪১২৭৫১৬।  সার্কুলেশন ম্যানেজার : আরিফ হোসেন জয়, মোবাইল ঃ ০১৮৪০০৯৮৫২১।  রিপোর্টার: ইফাত হোসেন চৌধুরী: ০১৬৭৭১৫০২৮৭।  রিপোর্টার: নাসির উদ্দিন হাজারী পিটু: ০১৯৭৮৭৬৯৭৪৭।  মফস্বল সম্পাদক: রাসেল: মোবা:০১৭১১০৩২২৪৭   প্রকাশক কর্তৃক ফ্ল্যাট নং- এস-১, জেএমসি টাওয়ার, বাড়ি নং-১৮, রোড নং-১৩ (নতুন), সোবহানবাগ, ধানমন্ডি, ঢাকা থেকে প্রকাশিত এবং সিটি প্রেস, ইত্তেফাক ভবন, ১/আর কে মিশন রোড, ঢাকা-১২০৩ থেকে মুদ্রিত।  বার্তা, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ০২-৪১০২০০৬৪।  ই-মেইল : [email protected], web : www.hazarikapratidin.com
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি