শিরোনাম: |
অভাবে লেখাপড়া করতে না পেরে মাছ চাষ, মাসিক আয় ৪০ হাজার টাকা
হাজারিকা অনলাইন ডেস্ক
|
অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর কঠোর পরিশ্রমে ধরা দেয় সফলতা। হার মানে দারিদ্র্য। তারই এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত মাগুরা সদর উপজেলার নরসিংহাটি গ্রামের মো. সাগর হোসেন। তিনি ২০১৮ সালে একটি ছোট পুকুর লিজ নেন। ৫০ হাজার টাকা ঋণ করে সেখানে মাছ চাষ শুরু করেন। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সাগর হোসেন জানান, ২০০৬ সালে তিনি এসএসসি এবং ২০০৮ সালে এইচএসসি পাস করার পর মাগুরা সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে অনার্সে ভর্তি হন। কিন্ত পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারণে তিনি আর লেখাপড়া এগিয়ে নিতে পারেননি। কখনও ইজিবাইক চালিয়েছেন, কখনও ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় দালালদের কাছে টাকা দিয়েছেন বিদেশে যাওয়ার জন্য। কিন্ত কোনো কিছুতেই তার ভাগ্য ফেরেনি। দুই ভাই-বোন ও বাবা-মায়ের সংসারে তিনিই উপার্জনের একমাত্র ভরসা হয়ে পড়েন। এরপর তিনি ২০১৮ সালে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে মাছ চাষ শুরু করেন।
তিনি আরও জানান, মাছ চাষ করে মাত্র তিন বছরে তিনি সফলতা পেয়েছেন। বর্তমানে চারটি পুকুরে মাছ চাষ করছেন। এসব পুকুরে রুই, কাতল, মৃগেল, সিলভার কার্প, কাতল ও বাটাসহ বিদেশি জাতের পুঁটি মাছ রয়েছে। এসব মাছ তিনি স্থানীয় জগদাল বাজারে বিক্রি করেন। সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতিমাসে গড়ে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা তিনি লাভ করছেন। বর্তমানে সাগর হোসেনের মাছের পুকুরগুলোকে ঘিরে এলাকার বেশ কয়েকজন বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের সুযোগও হয়েছে। তার দেখা দেখি অনেকে দিন দিন মাছ চাষের দিকে ঝুঁকছেন। তেমনি একজন একই গ্রামের মো. আব্দুর রফ দুখু। তিনি জানান, বর্তমানে তিনি সাগর হোসেনের মাছের পুকুরে হাজিরা হিসেবে কাজ করেন। তাতে তার সংসার ভালোই চলে যায়। কিন্ত তিনি নিজেই এখন মাছ চাষের জন্য পুকুর খুচ্ছেন। একই গ্রামের আকাম মোল্যা জানান, মাছ চাষ করতে অল্প পুঁজি লাগে। আবার অল্প পুঁজিতে ও স্বল্প সময়ে মাছ চাষে সফলতা দেখা যায়। তিনি সাগর হোসেনের পুকুরে মাঝে মধ্যে কাজ করেন এবং সেখান থেকে মাছ চাষের কলাকৌশল শিখে নিজেও মাছ চাষ শুরু করবেন। সাগর হোসেনের বাবা জাকির হোসেন জানান, বিদেশে যাওয়ার জন্য সাগর কয়েক বার দালালের কাছে টাকা-পয়সা দিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছে। স্বপ্ন ভেঙেছে বারবার। অবশেষে সাগর মাছ চাষ শুরু করলে মাত্র তিন বছরেই পরিবারের ভাগ্য খুলতে শুরু করেছে। তিনি তার একমাত্র মেয়েকেও বিয়ে দিয়েছেন। মাগুরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম আশিকুর রহমান বলেন, সাগর হোসেন নিজের চেষ্টায় এ পর্যন্ত এসেছেন। তবে মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে তাকে সার্বিক সহযোগিতা করা হয়। মাছ চাষের আধুনিক কলাকৌশল জানাতে মাঠকর্মীরা সব সময় তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। বর্তমানে সাগর হোসেন একজন সফল মাছ চাষি। বেকার যুবকদের এ ধরনের উদ্যোগের মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান এই মৎস্য কর্মকর্তা। |