শিরোনাম: |
আইন হাতে তুলে না নিতে ভারতীয় মুসলিম নেতাদের আহ্বান
|
আন্তর্জাতিক ডেস্ক ॥
ভারতের বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে তীব্র আন্দোলন শুরু হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি সহিংসতা দেখা গেছে দেশটির উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় আসামে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এই রাজ্যে স্থানীয় প্রশাসন কারফিউ জারি করলেও তা ভেঙে রাজপথে নেমে বিক্ষোভ করেছেন হাজার হাজার মানুষ। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে অন্তত তিনজনের প্রাণহানি ঘটেছে। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও অনেকে। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরোধীতা শুরু হওয়া এই বিক্ষোভের ঢেউ আছড়ে পড়েছে কলকাতা, মেঘালয়, ত্রিপুরা এবং আসামে। রাজধানী নয়াদিল্লির একট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে পুলিশ লাঠিচার্জ, টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করেছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশটিতে বসবাসরত সংখ্যালঘু মুসলিমরা শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ প্রদর্শনে সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। আইন নিজের হাতে না তুলে নিয়ে গণতান্ত্রিক উপায়ে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখার পরামর্শ দিয়েছেন ভারতীয় মুসলিমরা। ফুরফুরা শরিফের পীর ত্বহা সিদ্দিকী বলেছেন, ‘কেন্দ্রের নাগরিকত্ব আইন মানুষ মেনে নিতে পারছেন না। তাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করছেন। কিন্তু শুক্রবার থেকে রাজ্যের বেশ কিছু জায়গায় যে পদ্ধতিতে ট্রেনে পাথর ছোড়া, স্টেশন মাস্টারের ঘর থেকে শুরু করে বাসে আগুন জ্বালানো হয়েছে তা মেনে নেয়া যায় না।’ ‘আন্দোলন অবশ্যই করুন। কিন্তু দয়া করে কেউ আইন হাতে তুলে নেবেন না। এমন হিংসাত্মক আন্দোলন করলে যাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা হচ্ছে সেই রাজনৈতিক দলই সুবিধা পাবে।’ অল ইন্ডিয়া মিল্লি কাউন্সিলের পশ্চিমবঙ্গের সভাপতি ফজলুর রহমান বলেছেন, ‘কারও প্ররোচনায় পা না দিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করুন। না হলে আন্দোলনের গতি নষ্ট হবে।’ জামায়াতে ইসলামি হিন্দের পশ্চিমবঙ্গ সভাপতি মাওলানা আবদুর রফিক বলেছেন, ‘এই আইনের বিরুদ্ধে জনগণকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে আন্দোলন করতে হবে। দীর্ঘমেয়াদে আন্দোলনে সহিংসতার আশ্রয় নিলে কখনও ভালো ফল আসতে পারে না।’ বেঙ্গল ইমাম অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ ইয়াহিয়া বলেছেন, ‘বিজেপি সরকারের ধর্মীয় বিভাজনের নতুন আইনের বিরোধিতা করে মানুষ রাস্তায় নেমেছেন। কিন্তু আন্দোলন করতে গিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনা আন্দোলনের গতি বদলে দেবে। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।’ অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের রাজ্য কমিটির সদস্য মাওলানা নিজামুদ্দিম কাশেমি বলেন, ‘নতুন নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে যারা হিংসাত্মক ঘটনা ঘটাচ্ছেন, তারা ঠিক করছেন না। আমাদের দল এই ধরনের আন্দোলনের অনুমতি দেয়নি। আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে আন্দোলন করবেন না কেউ।’ কলকাতার প্রবীণ অধ্যাপক ওসমান গনির পর্যবেক্ষণ, ‘ভারতীয় মুসলিমদের এই করুণ পরিণতি দেখে আমার ঘুম নষ্ট হয়েছে। মানুষ অনেক কষ্টে, যন্ত্রণায় নতুন নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন। কিন্তু আন্দোলনকারীদের প্রতি আবেদন, শান্তির সঙ্গে গঠনমূলক আন্দোলনের পথ বেছে নিন। আন্দোলনের গতি নষ্ট হলে আন্দোলনকারীদেরই ক্ষতি হবে।’ আনন্দাবাজার। |