শিরোনাম: |
একুশের ভয়ংকর ওরা কোথায়?
হাজারিকা অনলাইন ডেস্ক
|
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা মামলার রায় হয় ঘটনার ১৪ বছর পর ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর। মামলার রােয় ঢাকা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ ১৯ জনের ফাঁসি, ১৯ জনের যাবজ্জীবন, ১১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন। নিম্ন আদালতের রায়ের প্রায় এক বছরে পরও শুনানির জন্য প্রস্তুত হয়নি আপিল আবেদন। একইভাবে মামলার রায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের ধরতে পুলিশ তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি, এমনকি আসামিদের সর্বশেষ তথ্যও পুলিশের কাছে নেই। গ্রেনেড হামলার মামলার রায়ের পর সাজাপ্রাপ্ত ৫১ আসামির মধ্যে পলাতক ছিলেন ১৮ জন। সম্প্রতি দণ্ডপ্রাপ্ত আসামী পুলিশের সাবেক ডিআইজি খান সাইদ হাসান এবং ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক উপকমিশনার ওবায়দুর রহমান খান আদালতে আত্মসমর্পণ করায় এখন পলাতক ১৬ জন পলাতক রয়েছেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক ১৬ আসামি রয়ে গেছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এই ১৬ জনের মধ্যে বর্তমানে ছয়জনের নামে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি হয়েছিল। পরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং দলটির সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের নাম রেড নোটিস থেকে সরিয়ে নেয় ইন্টারপোল।বর্তমানে ৪ আসামির নামে ইন্টারপোলে রেড অ্যালার্ট বহাল আছে। তারা হলেন- জঙ্গিনেতা মাওলানা মো. তাজউদ্দিন মিয়া, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, রাতুল আহমেদ বাবু এবং হানিফ পরিবহনের মালিক মোহাম্মদ হানিফ। ইন্টারপোলের রেড নোটিসে নাম থাকা চারজনসহ এ মামলার অন্য পলাতকদের অবস্থান কোথায়, ওই বিষয়ে কোনো স্পষ্ট তথ্য নেই বাংলাদেশ পুলিশের কাছে। গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রাপ্ত আসামি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্য যান এবং তার পর থেকে গত এক দশক সপরিবারে যুক্তরাজ্যে অবস্থান। একাধিক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত তারেককে ফেরত আনতে নানা উদ্যোগের কথা বিভিন্ন সময়ে সরকার বলেছে, কার্যত কোনাটাই সফল হয়নি। মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত অপর আসামি বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ সর্বশেষ দুবাই অবস্থান করছিলেন। তবে কোনো নির্দিষ্ট স্থানে দীর্ঘ সময় অবস্থান না করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে তিনি ভ্রমণ করছেন বলে জানা গেছে। ইন্টারপোলে রেড নোটিশ নাম তাজউদ্দিন সাউথ আফ্রিকা অথবা পাকিস্তানে, হারিছ চৌধুরী মালয়েশিয়ায় অথবা লন্ডনে, মোহাম্মদ হানিফ ভারত অথবা মালয়েশিয়ায় এবং রাতুল আহমেদ বাবু সাউথ আফ্রিকায় অবস্থান করছেন বলে তথ্য পাওয়া যায়। এছাড়া দণ্ডপ্রাপ্ত আসামী ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল এ টি এম আমিন আহমদ যুক্তরাষ্ট্রে ও অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল জোয়ারদার কানাডায় এবং হরকাতুল জিহাদ সদস্য আনিসুল মুরসালিন ওরফে মুরসালিন ও মহিবুল মুত্তাকিন ভারতের তিহার কারাগারে রয়েছেন। তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই। সিআইডির কাছে পলতাক আসামী মো. ইকবাল, মোহাম্মদ খলিল, মাওলানা লিটন ওরফে দেলোয়ার হোসেন জোবায়ের, জাহাঙ্গির আলম বদর, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই সম্পর্কে কোনো তথ্যই নেই। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি খোন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, আসামিরা বার বার স্থান পরিবর্তন করায় তাদের সর্বশেষ অবস্থান সম্পর্কে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। মামলার ৬ আসামীর অবস্থান সম্পর্কে আমরা নিশ্চিত। বাকি ১০জনের তথ্য নেওয়ার কাজ চলছে। পুরো তথ্য পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার মোট আসামি ছিল ৫২ জন। যাদের মধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা আলী আহসান মুজাহিদ ও ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ওপর হামলা মামলায় হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নান ও শরিফ শাহেদুল ইসলাম বিপুলের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। তাই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা থেকে তাদের অব্যাহতি দিয়ে ৪৯ আসামির বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল। যাদের মধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হারিস চৌধুরীসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় হয়। একই সঙ্গে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয় তিন সাবেক আইজিপিসহ ১১ সরকারি কর্মকর্তাকে। তাদের মধ্যে বর্তমানে কারাগারে আছেন লুৎফুজ্জামান বাবর ও আবদুস সালাম পিন্টুসহ ৩১ জন। |