শুক্রবার, ২৯ মার্চ, 2০২4
বানের পানিতে ডুবে ১০ শিশুর প্রাণহানি, লাখো মানুষ পানিবন্দি
হাজারিকা অনলাইন ডেস্ক
Published : Tuesday, 16 July, 2019 at 10:19 AM

কয়েকদিনের টানা ভারী বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। কমপক্ষে ১৮ জেলায় বন্যা ছড়িয়ে পড়েছে। নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লাখ লাখ মানুষ। বন্যার পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে ১০ শিশুর।
সোমবার (১৫ জুলাই) পৃথক ঘটনায় কুড়িগ্রাম, জামালপুর ও শেরপুরে পানিতে ডুবে ১০ শিশু মারা গেছে। এ নিয়ে গত একসপ্তাহে বন্যার পানিবাহিত বিভিন্ন রোগবালাই ও পানিতে ডুবে ২২ জনের মৃত্যু হল। বন্যা দুর্গত মানুষের সংখ্যা অন্তত ১১ লাখ বলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

দেশের ১৫ নদীর পানি বিপদসীমার ওপরে প্রবাহিত হয়েছে।পানি বাড়ায় বিভিন্ন জেলায় নদীভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে কয়েকশ’ বসতঘর ও বহু ফসলি জমি। বন্যায় ডুবে গেছে গ্রামীণ সড়ক, ক্ষেতের ফসল। ভেসে গেছে মাছের খামার। বিভিন্ন স্কুলে পাঠদান বন্ধ হয়ে গেছে। বন্যা কবলিত এলাকার পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষ নিজেদের থাকা-খাওয়া ও গবাদিপশু নিয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন। অনেকে গরু-ছাগল নিয়ে উঁচু সড়ক ও বাঁধে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। শুকনো খাবারের জন্য বন্যার্তদের মাঝে হাহাকার দেখা দিয়েছে। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ত্রাণ বিতরণ করা হলেও তা অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। টিউবওয়েল ডুবে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। ফলে ডায়রিয়াসহ নানা পানিবাহিত রোগবালাই ছাড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

দেশের বন্যা কবলিত জেলাগুলোর মধ্যে আছে- লালমনিরহাট, নীলফামারী, গাইবান্ধা, বগুড়া, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, সিলেট, সুনামগঞ্জ, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, কক্সবাজার, জামালপুর, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও টাঙ্গাইল। এর মধ্যে কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢল, বানের পানি ও দেশের ভেতরকার রেকর্ড বৃষ্টিপাতের কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির কোনো আশা দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা। তারা মধ্যমেয়াদি এই বন্যা ২১ জুলাই পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন। পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া্ বলেন, বাংলাদেশের উজানে ভারতীয় অংশে ও বাংলাদেশের ভেতরেও মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এতে বন্যার পানি আগামী কয়েক দিন দ্রুত বাড়তে পারে। চলমান বন্যা আরও এক সপ্তাহ ধরে বাড়তে পারে।

এ পরিস্থিতিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বন্যার্তদের জন্য বন্যাকবলিত এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় কেন্দ্র খুলতে নির্দেশ দিয়েছে। ওইসব আশ্রয় কেন্দ্রে একটি করে সেল স্থাপন করে প্রতিষ্ঠানপ্রধানকে সার্বক্ষণিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং জেলা প্রশাসকের (ডিসি) সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বলা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানপ্রধানকে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে সার্বক্ষণিক উপস্থিত থাকতেও বলা হয়েছে। বন্যায় সৃষ্ট নানা রোগবালাইয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ৬৭২ জন। সবমিলে ৬ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ১২২৫ জন। এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের (এফএফডব্লিউসি) বুলেটিনে বলা হয়েছে, সুরমা-কুশিয়ারা নদীর অন্তত ৭টি পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পুরনো সুরমা দিরাই পয়েন্টে বিপদসীমার ওপরে আছে। এছাড়া দেশের প্রধান নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। ১৪টি নদী ২৬ পয়েন্টে বিপদসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। এগুলো হচ্ছেÑ সুরমা, কুশিয়ারা, মনু, ধলাই, খোয়াই, পুরাতন সুরমা, সোমেশ্বরী, কংস, ধরলা, তিস্তা, ঘাগট, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও সাঙ্গু। বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ড. একেএম সাইফুল ইসলাম বলেন, শুধু বাংলাদেশই নয়, ভারত, নেপাল, ভুটান, চীন ও পাকিস্তানেও এই সময় বন্যা চলছে। এর মধ্যে পাকিস্তান বাদে অন্য দেশগুলোর কোনো কোনো অংশের বন্যা বাংলাদেশকেও আক্রান্ত করে।

বর্ষা শুরুর আগে এই বন্যার প্রধান কারণ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ি করে তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর একটি হলো বাংলাদেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আবহাওয়া চরম বৈরী আচরণ করছে। যখন গরম আসে, তখন তা রেকর্ড ভেঙে ফেলে। আবার বন্যা বা খরা এলে সেটাও তেমন পর্যায়ে পৌঁছায়।জলবায়ু পরিবর্তনের ফলেই বন্যা এখন ঘন ঘন হচ্ছে। ১৯৮৮ সালের পর ১৯৯৮ সালে বন্যা হয়। কিন্তু এরপর বড় বন্যা মাত্র ৬ বছরের মাথায় ২০০৬ সালে। আবার ২০১৬, ২০১৭ এবং এবার বন্যা হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ দিক এটি।


সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল হাজারী।   ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: গোলাম কিবরীয়া হাজারী বিটু্।   প্রকাশক: মোঃ ইব্রাহিম পাটোয়ারী।
সহ সম্পাদক- রুবেল হাসান: ০১৮৩২৯৯২৪১২।  বার্তা সম্পাদক : জসীম উদ্দিন : ০১৭২৪১২৭৫১৬।  সার্কুলেশন ম্যানেজার : আরিফ হোসেন জয়, মোবাইল ঃ ০১৮৪০০৯৮৫২১।  রিপোর্টার: ইফাত হোসেন চৌধুরী: ০১৬৭৭১৫০২৮৭।  রিপোর্টার: নাসির উদ্দিন হাজারী পিটু: ০১৯৭৮৭৬৯৭৪৭।  মফস্বল সম্পাদক: রাসেল: মোবা:০১৭১১০৩২২৪৭   প্রকাশক কর্তৃক ফ্ল্যাট নং- এস-১, জেএমসি টাওয়ার, বাড়ি নং-১৮, রোড নং-১৩ (নতুন), সোবহানবাগ, ধানমন্ডি, ঢাকা থেকে প্রকাশিত এবং সিটি প্রেস, ইত্তেফাক ভবন, ১/আর কে মিশন রোড, ঢাকা-১২০৩ থেকে মুদ্রিত।  বার্তা, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ০২-৪১০২০০৬৪।  ই-মেইল : [email protected], web : www.hazarikapratidin.com
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি