শিরোনাম: |
মায়ের চোখে সাইফউদ্দিন
হাজারিকা অনলাইন ডেস্ক
|
‘ছোটবেলা থেকেই খেলার পাগল ছিল ছেলেটা। ফুটবল-ক্রিকেট খেলতে কোথায়-কোথায় চলে যেত সাইফ। কখনো কখনো তার খোঁজ পড়ে যেত। কোথায় গেল ছেলেটা-আমার খুব টেনশন হত। কিন্তু পরে ঠিকই সন্ধ্যা ৭টা বা রাত ৮টা নাগাদ বাড়ি ফিরে আসত সাইফ।’ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের নবীন অলরাউন্ডার সাইফউদ্দিনের মা জোহরা বেগম এ প্রতিবেদকের কাছে সম্প্রতি বলছিলেন তার ছেলে সাইফের উঠে আসার গল্প। ফেনী শহরের ট্রাংক রোডের লাগোয়া উকিল নুরুজ্জামান সড়কের আল রাহা ম্যানশনের পাঁচ তলার একটি ফ্ল্যাটে এখন পরিবার নিয়ে বাস করছেন জোহরা বেগম। ফুলগাজীর জিএম হাট ইউনিয়নের নুরপুর গ্রামের মোবারক আলী ভুঁইয়া বাড়ির মরহুম আব্দুস সাত্তার ভুঁইয়া ও মরহমা শরিফা খাতুনের মেয়ে জোহরা। ১৯৭৯ সালে বিয়ে হয় পুলিশ কনষ্টেবল আব্দুল খালেকের সাথে। ফেনী সদরের ফাজিলপুর ইউনিয়নের পূর্ব শিবপুরের মরহুম ওহিদুর রহমানের ছেলে আব্দুল খালেক পুলিশ বিভাগের চাকুরির সুবাদে ঘুরে বেড়িয়েছেন বিভিন্ন জেলায়। ঢাকা, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জেলায় কর্মরত ছিলেন সাইফের পিতা খালেক। ৭২ সালে চাকরী জীবন শুরু করেন তিনি। দূর্ভাগ্যবশত চাকরীতে থাকাকালেই ২০০৮ সালে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। বড় মেয়ে আসমা আক্তার ও ছোট মেয়ে দিল আফরোজ বিবাহিত। বড় ছেলে কফিল উদ্দিন ও ছোট ছেলে আজহার উদ্দিন পড়াশোনা করছেন। তিন ভাইয়ের মধ্যে মেজো সাইফ উদ্দিন।
মা জোহরা বলেন, ‘সাইফের জন্ম হয় গ্রামের বাড়িতে-ফাজিলপুরের শিবপুরে। তখন তার বাবা বাড়িতে ছিলেন না। চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে তার কর্মস্থল ছিল। তার জন্মের কয়েকদিন পর ছুটি নিয়ে নবজাতক সাইফকে দেখতে আসেন তার পিতা খালেক। বটতলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাইমারির পড়া শেষ করে করৈয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ে সাইফ। পরে ভর্তি হয় ফেনীর শাহীন একাডেমী স্কুলে। বাসা ছিল শহরের কদলগাজী সড়কে। সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাওয়া-আসা করত ডানপিটে সাইফ। ফুটবল-ক্রিকেট খেলতে কোথায় কোথায় চলে যেত। খেলার নেশায় পেয়ে বসেছিল সাইফকে।’ মা জানান-‘বাড়িতে নানা কারণে কয়েক বছর থাকতে হয়েছিল এ পরিবারকে। বাড়িতে বিদ্যুৎ না থাকলে অনেক সময় টিভিতে খেলা দেখতে পাশ^বর্তী বটতলী বাজারে চলে যেত সাইফ। ফুটবল-ক্রিকেট খেলা দেখতে খুব ভালোবাসত সে। অনেক সময় স্থানীয় বিভিন্ন টুর্নামেন্টে অংশ নিত। অল্প কিছু টাকাও পেত ওইসব খেলায় অংশ নিয়ে। বাড়িতে এসে আনন্দের সাথে ওই টাকা তুলে দিত মায়ের হাতে। একদিন মায়ের হাতে ১০ টাকার নোট তুলে দিয়ে বলল-আমার খেলা দেখে এক ভাই ১০ টাকা উপহার হিসেবে দিয়েছেন। একসময় বড় ভাই কফিল ছিল তার খেলার সাথী। মা বলেন, একদিন বটতলী বাজারে খেলতে গিয়ে সে আর আসেনা। আমিতো টেনশনে শেষ। পরে রাত ৮টার দিকে বাড়ি ফিরে এলো সাইফ। সাইফের ভাই কফিল উদ্দিন বলেন, সমসময় বায়না ধরত ওর সাথে খেলার জন্য।। অনেক সময় খেলতে গিয়ে ঝগড়াও হত। কিন্তু সাইফ ছিল নাছোড়বান্দা। খেলার বিষয়ে ছিল তার নেশা। যেন বড় খেলোয়াড় হবার নেশা পেয়ে বসেছিল তাকে। সাইফের মা জোহরা জানান, ছোটবেলা থেকে মায়ের শাসন আর পিতার আদরে বড় হয় সাইফ। পিতা কর্মের কারণে বাইরে থাকতেন। মাঝে মাঝে বাড়ি আসতেন। তার কাছে ছিল সাইফের আবদার। মা সবসময় তার কাছে থাকতেন আর শাসনে রাখতেন। তাই মা’কে কিছুটা ভয় পেত সাইফ। ২০০৫ সালে ফেনীতে এসে ফ্রেন্ডশীপ ক্রিকেট ক্লাবে চর্চা শুরু করে সাইফ। ওই ক্লাবের ক্রীড়া সম্পাদক কামরুল হাসান রানা বলেন, ২০০৯ সালে অনুর্ধ ১৪ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ও পরে অনুর্ধ ১৯ টুর্নামেন্ট খেলাটা ছিল সাইফের জন্য টার্নিং পয়েন্ট। পরে যুব বিশ্বকাপেও ভালো করে সে। সে খুবই পরিশ্রমী ছিল। নিয়মিত চর্চা করত। ক্লাবের সবাই তাকে ভালোবাসত। বিভিন্ন সামগ্রী উপহার হিসেবে দিত। কামরুল জানান, সেই ছোট্ট সাইফের খেলা দেখেই ওই সময় ফেনীর ক্রীড়া বোদ্ধারা সাইফের প্রশংসা করেন। সাইফের মা বলেন, ‘আমার ছেলে নিজের প্রচেষ্টায় এবং আল্লাহর রহমতে এখন একটা পর্যায়ে চলে গেছে-এজন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাই। কিন্তু কষ্ট পাই এই ভেবে-তার পিতা এটা দেখে যেতে পারেন নি। দেখলে তিনি খুবই খুশি হতেন। তিনি বলেন, সবাই সাইফের জন্য দোয়া করবেন-যাতে সে বিশ^কাপে ভালো খেলে দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে পারে।’ |