শুক্রবার, ২৯ মার্চ, 2০২4
মুরসি ‘হত্যার’ নেপথ্যে যুক্তরাজ্যের অস্ত্র চুক্তি
Published : Tuesday, 25 June, 2019 at 4:56 PM

আন্তর্জাতিক ডেস্ক ॥
যুক্তরাজ্যের জোটভূক্ত বেশ কয়েকটি দলের এমপি ২০১৮ সালে মুরসির সঙ্গে দেখা করার জন্য মিসর সরকারের কাছে অনুমতি চায়। তারা আশঙ্কা করেছিল, দেশটিতে প্রথমবারের মতো গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুরসি মৃত্যুর আশঙ্কা প্রকাশ করে এমন পদক্ষেপ নেয় তারা। কিন্তু মিসর কর্তৃপক্ষ কারগারে মুরসির সঙ্গে দেখা করা যাবে না বলে ব্রিটিশ এমপিদের স্পষ্ট জানিয়ে দেয়।

কারাগারে মুরসির সঙ্গে দেখা করার অনুমিত না দেয়ার পর তারা এটা জোর দিয়ে বলে যে, সেখানে তাকে সন্তোষজনক চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। কিন্তু মুরসিকে যে যথাযথ চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে এর পক্ষে তারা কোনো প্রমাণ হাজির করতে পারে না। অবশেষে সম্প্রতি মুরসির আদালত প্রাঙ্গনে মারা গেছেন। আর এর জন্য মুরসির চিকিৎসার ক্ষেত্রে সরকারের ব্রিটিশ এমপিদেরকে মিসরে এসে কারাগারে মুরসির সঙ্গে দেখা করার জন্য মিসর ভিসা প্রদান করেনি সমস্যাটা সেখানে নয়। কেননা তার আগেই বেশ কয়েক বছর ধরেই মিসর কর্তৃপক্ষ ব্রিটিশ রাজনীতিবিদদের কায়রো আসার ক্ষেত্রে বাঁধা প্রদান করছে। কেননা তারা যুক্তরাজ্যের সঙ্গে গ্যাস উত্তোলন থেকে শুরু করে টেলিকমিউনিকেশন পর্যন্ত বেশ কিছু বাণিজ্য চুক্তি স্থগিত করে রেখেছে।

মুরসি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার দুই বছর পর ব্রিটিশ সরকার মিসরে তাদের কোটি কোটি পাউন্ডের অস্ত্র বিক্রির প্রক্রিয়া পুনরায় চালু করে। তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর মিসরের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার প্রক্রিয়া অংশ হিসেবে ফের এই অস্ত্র ব্যবসা শুরু হয়। যুক্তরাজ্যের কোম্পানি ব্রিটিশ পেট্রোলিয়াম এবং ভোডাফোনের সঙ্গে করা চুক্তি থেকে মিসর সামান্য কিছু লাভ করলেও ব্যয়বহুল অস্ত্রের কারণে তা কোনো কাজে আসেনি। কিন্তু বদনাম আছে এমন একটি রাষ্ট্র হিসেবে মিসরের জন্য এটা গুরুত্ব বহন করে। কেননা এর মাধ্যমে গোটা বিশ্বের কাছে বৈধতা পায় তারা।

বৈশ্বিক এই বৈধতার কারণে মিসর সরকার তাদের হাজারো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ধামাচাপা দিতে পারে। এসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বিশ্বের সব মানবাধিকার সংস্থাগুলো জোরালো প্রমাণসহ হাজির করলেও পশ্চিমা দেশগুলো তা মানতে অস্বীকৃতি জানায়। তখন মিসরে ৬০ হাজারেরও বেশি রাজনৈতিব বন্দী ছিল এবং সংখ্যালঘুদের গুম করে দেয়ার ঘটনা ঘটছিল। মুরসিকে সামরিক অভূত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত মিসরের ক্ষমতায় আসেন তৎকালীন সেনাপ্রধান সিসি। তিনি ক্ষমতায় আসার পর গোটা দেশে নানামূখী বৈশ্বিক নীতি গ্রহণ করলেও বাদ পড়ে যায় দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয়।

প্রথমটি হলো ২০১৩ সালের রাবা গণহত্যা। যেখানে বিক্ষোভরত অবস্থায় তার সমর্থক হিসেবে পরিচিত ১ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়। যার মাধ্যমে সরকার যে বিচারবহির্ভূতভাবে মানুষকে নানাবাবে দণ্ড দিচ্ছে সেই বিষয়টি উঠে আসে। দ্বিতীয়টি হলো ২০১৬ সালে ইতালিয়ান শিক্ষার্থী জুলিও রেগেনি হত্যাকাণ্ড, যা নির্যাতনের আরেকটি নির্মম উদাহরণ। মুরসির মৃত্যুর পর গোটা বিশ্বে প্রশ্ন উঠেছে বিনা চিকিৎসায় দেশটির প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের জীবনাবসান হয়েছে আদালতে হাজিরা দেয়ার সময়। মুরসির ডায়াবেটিস, লিভার এবং কিডনি সমস্যায় ভুগছিলেন। আইনজীবী ও পরিবারের অনুরোধ সত্ত্বেও তাকে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়নি।

মিসরের রাষ্ট্রায়ত্ব গণমাধ্যম যেগুলো সিসি ক্ষমতায় আসার পর থেকে তার পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে আসছিল তারা এই ঘটনার পুরোটাই ধামাচাপা দিয়েছে। পত্রিকার প্রথম পাতায় ছোট করে মুরসির মৃত্যুর খবর ছাপানো হয়েছে। এ ছাড়া বেশ কিছু সাংবাদিককে সরাসরি টিভিতে মুরসির মৃত্যুর বিষয়টি উদযাপন করতেও দেখা গেছে। জাতিসংঘ, মার্কিন কংগ্রেস উইমেন ইলহান ওমর, যুক্তরাজ্যের বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা জেরমি করবিন এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মুরসির হত্যার জন্য কারা দায়ী এ বিষয়ে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত করার দাবি জানিয়েছে। কিন্তু মিসরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী উল্টো দেশটিতে কারাবন্দী অনেক মানুষের পরিবারকে কারাগারে দেখা করার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। সেসব বন্দীদের আশঙ্কা মুরসির মেো তাদের প্রিয়জনদেরও বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হবে।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে এবং প্রধানমন্ত্রীর পদের জন্য তালিকায় থাকা সাবেক ও বর্তমান পররাষ্ট্র মন্ত্রী বরিস জনসন ও জেরমি হান্টও মুরসির মৃত্যুর জন্য দায়ীদের খুঁজে বের করতে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছে। ব্রিটিশ সরকার এখান বারবার সতর্ক করে আসছে যে, যদি তারা মানবাধিকারকে দূরে ঠেলে অর্থনীতিকে গুরুত্ব দিয়ে মিসরের সঙ্গে তাদের স্বাভাবিক ব্যবসা অব্যাহত রাখে তাহলে মিসরের জনগণের জীবন ভয়ঙ্কর অবস্থার দিকে ধাবিত হবে। আরও শোচনীয় জীবন যাপন করতে হবে তাদের। আদালতের কাছে মুরসি বারবার আবেদন করেছেন যেন তাকে বিশেষ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। কেননা তার শারীরিক অবস্থা মোটেও ভালো না। কিন্তু তাকে বিশেষ চিকিৎসেবা তো দেয়া হয়ই নি উল্টো শব্দ নিরোধক একটা কাঁচের ঘরে করে তাকে রাখা হয়। আদালতে ঠিক সেই অবস্থাতেই কথা বলতে বলতে মারা যান তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল হাজারী।   ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: গোলাম কিবরীয়া হাজারী বিটু্।   প্রকাশক: মোঃ ইব্রাহিম পাটোয়ারী।
সহ সম্পাদক- রুবেল হাসান: ০১৮৩২৯৯২৪১২।  বার্তা সম্পাদক : জসীম উদ্দিন : ০১৭২৪১২৭৫১৬।  সার্কুলেশন ম্যানেজার : আরিফ হোসেন জয়, মোবাইল ঃ ০১৮৪০০৯৮৫২১।  রিপোর্টার: ইফাত হোসেন চৌধুরী: ০১৬৭৭১৫০২৮৭।  রিপোর্টার: নাসির উদ্দিন হাজারী পিটু: ০১৯৭৮৭৬৯৭৪৭।  মফস্বল সম্পাদক: রাসেল: মোবা:০১৭১১০৩২২৪৭   প্রকাশক কর্তৃক ফ্ল্যাট নং- এস-১, জেএমসি টাওয়ার, বাড়ি নং-১৮, রোড নং-১৩ (নতুন), সোবহানবাগ, ধানমন্ডি, ঢাকা থেকে প্রকাশিত এবং সিটি প্রেস, ইত্তেফাক ভবন, ১/আর কে মিশন রোড, ঢাকা-১২০৩ থেকে মুদ্রিত।  বার্তা, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ০২-৪১০২০০৬৪।  ই-মেইল : [email protected], web : www.hazarikapratidin.com
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি