শিরোনাম: |
বাড়িঘর ছেড়ে চলে যাচ্ছে শত শত পরিবার
|
জেলা প্রতিনিধি ॥
জোয়ারের পানি আসা শুরু হতে না হতেই যমুনায় দেখা দিয়েছে ভয়াবহ ভাঙন। ভাঙনের ফলে বর্ষার শুরুতেই যমুনার পেটে যাচ্ছে নদী তীরবর্তী টাঙ্গাইলের মামুদনগর ইউনিয়নের ঘর-বাড়ি ও ফসলি জমি। পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরিভাবে জিওব্যাগ ফেলে ভাঙনরোধের চেষ্টা করলেও তা পানির গ্রোতে ভেসে যাচ্ছে। ভাঙন আতঙ্কে ইতোমধ্যে ওসব গ্রামের সহগ্রাধিক পরিবার অন্যত্র চলে গেছে। ইতোপূর্বে ইউনিয়নটির ৭নং ওয়ার্ড সম্পূর্ণভাবে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনরোধে একটি স্থায়ী বাঁধের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, বৃষ্টির ঢলে যমুনার পানি বেড়ে যাওয়ায় মামুদ নগর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। ভাঙনরোধে পাউবোর আপদকালীন তহবিল থেকে ১২টি স্প্যানের জায়গা নির্ধারণ করে প্রতি স্প্যানে তিন হাজার করে জিওব্যাগ ডাম্পিং করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। জরুরি কার্যক্রম হিসেবে ১৭ জুন থেকে ওসব স্প্যানে জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। সরেজমিনে দেখা যায়, যমুনার বাম তীরে অবস্থিত টাঙ্গাইল সদর উপজেলার মামুদ নগর ইউনিয়নের সাতটি গ্রাম ভেঙে গেছে। গ্রামগুলোর মধ্যে রয়েছে কুকুরিয়া, কেশব মাইঝাইল, মাইঝাইল, সোনা মাইঝাইল, বারবাড়িয়া, চালা বাকলা ও বানিয়াপাড়া। এসব গ্রামের পাঁচ শতাধিক পরিবার বর্ষার শুরুতেই ভাঙনের শিকার হয়ে অন্যত্র চলে গেছে। ভাঙনের কবলে পড়ে পাট, ধান, বাদামসহ বিপুল পরিমাণ ফসলি জমি ইতোমধ্যে যমুনার গর্ভে বিলীন হয়েছে। এর আগে বৃষ্টির কারণে যমুনায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অসময়ের ভাঙনের শিকার হয়ে আরও পাঁচ শতাধিক পরিবার অনত্র্য চলে যায়। ভরা বর্ষায় যমুনার গ্রোতে ভেসে যাওয়ার আশঙ্কায় অনেকেই আগেভাগেই গবাদি পশুসহ ঘর-বাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। ভাঙনকবলিত এলাকার আব্দুল হাই, করিম শেখ, জুলহাস, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিল, আবু সাইদ, সিরাজুল ইসলাম, মো. কছির উদ্দিন মন্ডল, রাজ্জাক প্রামাণিক, আ. খালেক রোশনাই, সাবেক মেম্বার আজমত আলী, আরমান, মান্নান, জিন্নত সরকার, আ. সামাদ ও রহম আলী সরকারসহ অনেকেই জানান, যমুনা সর্বগ্রাসী। প্রতি বছরই আমাদের ঘর-বাড়ি ও ফসলি জমি কেড়ে নেয়। মামুদ নগর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড পুরোটাই যমুনার পেটে। ওয়ার্ডের দুই হাজার ৭০০ ভোটারের প্রত্যেকের পরিবার আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি কিংবা নিজেরা অন্যত্র বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছেন। দুটি হাই স্কুল, চারটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদরাসা-মসজিদ, গোরস্থানসহ অনেক প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এছাড়া পাঁচটি মসজিদ, তিনটি গোরস্থানসহ পাঁচ শতাধিক ঘর-বাড়ি ও বিপুল পরিমাণ ফসলি জমি ভাঙনের মুখে রয়েছে। কুকুরিয়া গ্রামের করিম শেখ জানান, তার নিজের ১৬ বিঘা ফসলি জমি যমুনা গ্রাস করেছে। তিনি আগেই বাজারের পাশে বাড়ি করেছিলেন। বর্তমানে সেই বাড়িটি তার একমাত্র সম্বল। একই গ্রামের আবু সাইদ জানান, তাদের পরিবারের ১৫০ বিঘা জমি ছিল। সবই যমুনার পেটে চলে গেছে। তিনি করটিয়ায় বাড়ি নির্মাণ করে সেখানে বসবাস করছেন। মামুদ নগর ইউপি চেয়ারম্যান মো. মাজেদুর রহমান তালুকদার জানান, যমুনা ও ধলেশ্বরীর ভাঙনে মামুদ নগর ইউনিয়নের মানুষ দিশেহারা। একদিকে যমুনার করাল গ্রাস অন্যদিকে ধলেশ্বরীর বিরামহীন ভাঙনে ইউনিয়নবাসীর নাভিশ্বাস উঠেছে। ইতোমধ্যে ইউনিয়নটির বসতবাড়ি, প্রাইমারি ও হাই স্কুল, মসজিদ, মাদরাসাসহ ফসলি জমির নদীগর্ভে বিলীন হয়ে অনেক কোটি টাকার ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, কুকুরিয়া থেকে উজানে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একটি প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে স্থায়ী বাঁধের নির্মাণকাজ শুরু হবে। তবে ভাঙনরোধ ও জরুরি ব্যবস্থা হিসেবে ওই এলাকায় ১২টি স্প্যানে ৩৬ হাজার জিওব্যাগ ফেলা হয়েছে। স্প্যানে জিওব্যাগ ফেলার কারণে পানির গ্রোতের গতি অনেকটা পরিবর্তিত হয়ে পশ্চিম দিকে সরে গেছে। তবে দুই স্প্যানের মাঝে ভাঙন দেখা দেয়ায় সেখানেও জিওব্যাগ ডাম্পিং করা হচ্ছে। এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আরও পাঁচ হাজার জিওব্যাগ মজুত রাখা হয়েছে। ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষের সাহায্যে পাউবো সবসময় প্রস্তুত রয়েছে। |