শিরোনাম: |
হাজারীর ১৫ই জুনের ফেসবুক ভাষণ
|
স্টাফ রিপোর্টার॥ এবারের ভাষণে জয়নাল হাজারী প্রধানত সাবেক সংসদ সদস্য তালেব আলীর প্রসঙ্গেই আলোচনা করেন। বিশেষ করে তালেব আলীর নামাজের জানাজায় খুব অল্পসংখ্যক মানুষের সমাবেশ হওয়ায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। হাজারী বলেন তালেব আলী দুইবারের সংসদ সদস্য ও একাবার প্রাদেশীক পরিষধের সদস্য ছিলেন। তিনি সৎভাবেই জীবন-যাপন করেছেন। কোন সন্ত্রাস বা দূর্নীতেতে যুক্ত ছিলেন না। তালেব আলী উনসত্তরের গণআন্দোলনের সময় সোনাগাজী থানার কুটির হাট স্কুলের হেডমাষ্টার ছিলেন কিন্তু ঐ এলাকাটি জামায়েত শিবির অধ্যুাশিত ছিল। ফলে সেখানে আন্দোলন করতে গিয়ে বড় ধরনের বিপদের মধ্যে ছিলেন। একদিন ফেনীতে এলে পাচগাছিয়া রোডের পুবমাথায় শিবির কর্মীরা ওনাকে আক্রামণ করলে তিনি খাজা আহম্মদের তৃপ্তি রেস্টুরেন্টে আশ্রয় নেন। পড়ে সেখানে খাজা আহম্মদ এসে তাকে এলাকায় পাঠিয়ে দেন। এভাবে খাজা আহম্মদ সাহেবের সঙ্গে তালেব আলীর যোগাযোগ হয় এবং তালেব আলী উনসত্তুরেই আ.লীগে যোগ দেন। ১৯৭৩ সনে প্রথম তালেব আলী সোনাগাজী এলাকার এমপি নির্বাচিত হন। কিছুদিন পরেই খাজা আহম্মদের সঙ্গে তালেব আলীর বিরোধ দেখা দেয়। ১৯৭৪ সনে তালেব আলী খাজা আহম্মদের সঙ্গে জেলা আ.লীগের সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। মুছা সাহেবসহ জোট গঠন করে তালেব আলী খাজা সাহেবকে সুরত মহল সিনেমার কাউন্সিলে পরাজিত করে ফেনী জেলা আ.লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। তালেব আলী কেন্দ্রীয় আ.লীগেরও শ্রম সম্পাদক ছিলেন। এহেনু একজন সৎ ও ত্যাগী নেতার জানাযায় মিজান ময়দানে মাত্র ৩০০ লোক উপস্থিত ছিল। এর চাইতে দুর্ভাগ্যজনক আর কিছু নাই। বলা হয়ে থাকে ফেনীতে আ.লীগ ছাড়া আর কিছু নাই। তাহলে এই আ.লীগ নেতার জানাজায় ঐ সব আ.লীগের নেতারা এলো না কেন? এতে প্রমাণ করে ফেনীতে স্বার্থের আ.লীগ আছে, আসল আ.লীগ নেই। এ প্রসঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা ফেনী জেলা কমান্ডার মীর আব্দুল হান্নানের মৃত্যুতেও গভীর শোকও দুঃখ প্রকাশ করেন। এরপর হাজারী সাখাওয়াতের ব্যাপরে কথা বলেন। সাখাওয়াত কিছুদিন আগে জেল থেকে জামিন নিয়ে মুক্তি পেলেও তাকে জেলগেট থেকে আবার থানায় নিয়ে নতুন মামলায় জড়িত করে জেলে পাঠায়। তাকে জেলখানায় ফাঁসির সেলে রাখা হয়েছিল এবং কারো সঙ্গে দেখা করতে দেয়া হতো না। এবারের উপজেলা নির্বাচনের দিন রাতে তাকে দুটো মিথ্যা মামলা দিয়ে প্রথম গ্রেফতার দেখানো হয়। সে রাতেই সেন্ডিকেটের ক্যাডারেরা তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। কয়েক ঘন্টা নির্যাতন করার পড় তাকে একটি পুলিশ ফাড়িতে প্রেরণ করে। সেখানেও তার উপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। পরদিন ফেনী থানায় চালান দিলে সেখানেও তাকে নির্যাতনের শিকার হতে হয়। এভাবে এক সময় যে বা যারা আমার বিরুদ্ধে যাই করেছে আমি সকলকে ক্ষমা করে দিলাম। এর পরও এইসবই হয়েছে সেন্ডিকেট নেতার ইঙ্গিতে। সাখাওয়াত কোন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নয় তবুও তাকে ফাঁসির সেলে রাখা হয়েছিল। বহিরাগত দুই সন্ত্রাসী অবৈধভাবে জেলখানায় ঢুকে সাখাওয়াতকে হুমকি দিয়ে বলেছিল জামিনের চেষ্টা করলে একরামের মতই পুড়িয়ে মারা হবে। ফেনী জেলার রফিকুল কাদেরকে উদ্দেশ্য করে হাজারী বলেন এসব অন্যায় অবিচার অভিলম্বে বন্ধ করুন। তিনি বলেন আপনি জানানে ওসি মোয়াজ্জেম ও ফেনীর এসপিকে সেন্ডিকেট নেতা বাঁচাতে পারেনি। নুসরাতের মামলা প্রসঙ্গে হাজারী বলেন মনে হয় মামলার কার্যক্রম ঠিকঠাক মতই চলছে। তিনি বলেন ওসি মোয়াজ্জেম পুলিশের নজরেই আছে। তবে তাকে কোন ধরনের আইনের আওতায় আনা হবে তা ঠিক করতেই তাকে গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে না। তবে দুই একদিনের মধ্যেই সে আইনের আওতায় আসবে তাতে কোন সন্দেহ নাই। মেঘনা-গোমতী সেতু খুলে দেয়ায় দক্ষিণপূর্ব এলাকার মানুষ খুবই আনন্দিত এবং এ জন্য তিনি নেত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তবে তিনি বলেন এখন আর কুমিল্লায় বাস থামানোর কোন যুক্তি নাই। টোলপ্লাজাতে স্মার্টকার্ড চালু করার দাবি করেন। ফেনীর আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে হাজারী বলেন ফেনীর সদর হাসপাতালের কাছে একজন ফকিরের কাছ থেকে দিনে দুপুরে ছিনতাইকারীরা ১৯ হাজার টাকা ছিনতাই করে নিয়েছে। এই ধরনের ঘটনা ফেনী অঞ্চলে কখনোই ঘটেনাই। এভাবে ফেনী স্টেশন থেকে একটি ভয়াবহ ট্রেন ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ট্রেন ডাকাতির ঘটনাও কখনোই ফেনীতে ঘটেনাই। তারপরও সন্ত্রাসীর ক্যাডেরেরা কেবলি বলছে ফেনীতে শান্তির সুবাতাস বইছে। রমজান মাসেই গালস স্কুলের পিয়নকে হত্যা করে তার বেতনের সমস্ত টাকা লুটে নিয়েছে। এখন মানুষের চোখে মুখে ¯েপ্র করে অহরহ টাকা পয়সা লুট করছে। কয়েকদিন আগে ফেসবুকের মাধ্যমে আমি ওবায়দুল কাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলাম এবং বলেছি কারণটি পড়ে বলবো কারণটা হচ্ছে ওবায়দুল কাদেরকে বলা হয়েছিল সোনাগাজীর রুহুলআমিন ও এসপিকে যেকোনভাবে নুসরাত হত্যা মামলা থেকে বাঁচাতে হবে কিন্তু ওবায়দুল কাদের বলেছে এসব তদবির নিয়ে আমার কাছে এসো না। এ মামলাটি প্রধানমন্ত্রী নিজে তদারক করছেন। এবারে ফেনী জেলার রাজনীতি প্রসঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় হাজারী বলেন ফেনী জেলা ছাত্রলীগের মেয়াদ চার বছর পার হয়ে গেছে এবং এই সংগঠনের দুই নেতাই বিবাহিত। ছাত্রলীগের নেতা হতে গেলে বিবাহিত হওয়া অবৈধ। সভাপতি ফিরোজ ও জজ ছেলে ভাল এবং মূলত এরা চাঁদাবাজ বা সন্ত্রাসী নয়। ওসি মোয়াজ্জেম নুসরাত হত্যা মামলায় যে কয়জনকে আসামী করেছিল তাদের মধ্যে থেকে ৫-৬জনকে পিবিআই অব্যাহতি দিয়েছে। এখন আমার মনে হয় এরা ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণের মামলা করতে পারে। এরপর জীবনান্দদাসের একটি কবিতার কয়েক লাইন পাঠ করেই হাজারী তার কথা শেষ করেন।
|