শুক্রবার, ২৯ মার্চ, 2০২4
প্রতারণার নতুন ফাঁদ ‘গ্রামীণফোন টাওয়ার সার্ভিস’
Published : Thursday, 13 June, 2019 at 9:09 PM

স্টাফ রিপোর্টার॥
চাকরি দিচ্ছে ‘গ্রামীণফোন ফোর-জি টাওয়ার সার্ভিস’। তাদের কাগজপত্রে গ্রামীণফোনের লোগো আছে, রংটাও হুবহু। কিন্তু এই নামে বেসরকারি টেলিফোন অপারেটরের কোনো উদ্যোগ নেই। তবে বেকারদের কাছে ভালো বেতনের চাকরির হাতছানি। তাই আগপাছ চিন্তা না করে হাজার হাজার জীবনবৃত্তান্ত জমা পড়ছে।
সাপ্তাহিক ‘চাকরির খবর’ পত্রিকায় গত ৩ মে একটি চাকরির বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। সেখানে বলা হয়, ‘গ্রামীণফোন ফোর-জি টাওয়ারে সরাসরি চাকরি। সারা দেশব্যাপী ২০ বছর স্থায়ীভাবে কাজ করার জন্য নিজ থানা ও জেলায় পুরুষ/মহিলা নিয়োগ।’
সেখানে বেতনের অঙ্কটাও আকর্ষণীয়। অষ্টম বা এসএসসি পাস হলে বেতন ১২ হাজার ৫০০ থেকে ১৭ হাজার ৫০০ টাকা। উচ্চ মাধ্যমিক পাস হলে বেতন ২১ হাজার ৫০০ টাকা। বিবিএ বা এমবিএ ২৫ হাজার ৭০০ টাকা বেতনের কথা বলা হয় বিজ্ঞপ্তিতে। আর এর বাইরে দৈনিক যাতায়াত ও আনুষঙ্গিক ভাতা টিএ, ডিএ দেওয়া হবে। থাকবে ভবিষ্যৎ তহবিল বা প্রভিডেন্ড ফান্ড। এককালীন পেনশন আর বিনামূল্যে থাকা-খাওয়া, মোটরসাইকেল দেওয়ার কথাও বলা হয় এতে। এর বাইরে বছরে দুটি বোনাস এবং বার্ষিক ১৮ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির কথাও বিজ্ঞপ্তিতে রয়েছে।
তবে এত সুযোগ-সুবিধা আর বেতন-ভাতা দিয়ে এই পর্যায়ে কোনো চাকরি গ্রামীণফোন দিচ্ছে না বলে ঢাকা টাইমস নিশ্চিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা এভাবে কোনো বিজ্ঞাপন দিয়ে চাকরি দেয় না। এটি নিশ্চিতভাবেই প্রতারণা।
তবে সাধারণের অত কিছু জানার সুযোগ নেই। তাই চাকরি পেতে বিজ্ঞপ্তিতে দেওয়া ফোন নম্বরে ক্রমাগত ফোন যাচ্ছে, সেটা বোঝা যায়। নম্বরটি বেশিরভাগ সময়ই ব্যস্ত দেখায়। আর ই-মেইলেও বিপুল পরিমাণ জীবনবৃত্তান্ত বা সিভি জমা পড়ছে, সেটি বিজ্ঞাপনদাতাদের কথাতেই স্পষ্ট।
চাঁদপুর থেকে বিজ্ঞাপনটি পেয়ে ঈদের সপ্তাহখানেক আগে বিজ্ঞাপনের সঙ্গে  দেওয়া নম্বরে যোগাযোগ করেন ইউসুফ প্রধানিয়া। মোবাইল ফোনে ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে জীবনবৃত্তান্ত পাঠাতে বলা হয় তাকে।
এক ঘণ্টা পরে জানানো হয়, প্রাথমিক বিচারে ইউসুফকে মনোনীত করা হয়েছে। ই-মেইলের মাধ্যমে জীবনবৃত্তান্তের সঙ্গে সংযুক্ত কাগজপত্র পাঠাতে বলা হয় তাকে। কাগজপত্র হাতে পেয়ে তাকে গ্রামীণফোনের লোগো ও নামযুক্ত একটি ফর্ম ই-মেইলের মাধ্যমে পাঠানো হয়। সেই সঙ্গে চাকরি নিশ্চিত করতে তিন হাজার টাকা পাঠাতে বলা হয়।
ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশান-১ নম্বরের ১১০ নম্বর সড়কের ২২/এ বাসার তৃতীয় তলায় প্রতিষ্ঠানটির প্রধান অফিসের কথা জানানো হয় ফরমে। আরেক অভিজাত এলাকা বারিধারার জে ব্লকের ১/এ সড়কের ৪১ নম্বর বাসায় আরো একটি শাখা অফিস আছে বলেও উল্লেখ আছে এতে।
ইউসুফ প্রধানিয়ার বড় ভাই নূর মোহাম্মদ প্রধানিয়া বলেন, ‘সিভি, সার্টিফিকেটের কপি, ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি পাঠানোর পর তারা জানায়, চাকরি কনফার্ম করতে তাদের তিন হাজার টাকা পাঠাতে হবে। পরে আমি বিকাশে তাদের এক হাজার ৫৮০ টাকা পাঠাই।’
‘তিন হাজার টাকার জায়গায় দেড় হাজার টাকা পাঠানোর পর ওই প্রতারক চক্রের পক্ষ থেকে জানানো হয় পরদিন সকাল ১০টার মধ্যে বাকি টাকা না দিলে চাকরি বাতিল হয়ে যাবে।’
এই পর্যায়ে বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলার পর সন্দেহ জাগে নূরের মনে। বলেন, ‘পরে আমি কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, তারা প্রতারক। আমি ফোন করে তাদের কাছে টাকা ফেরত চাইলে তারা আমাকে বলে, চাকরির জন্য তারা টাকা নিলে তা আর ফেরত দেয়া হয় না। এরপর থেকে আমি তাদের অনেকবার ফোন করেছি, কিন্তু তারা আমার ফোন ধরছে না।’
বিজ্ঞাপনের সঙ্গে দেয়া যোগাযোগের নম্বরে ঢাকা টাইমস থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। একটি কল ধরেন নারী কণ্ঠে একজন। চাকরির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ওই একই প্রক্রিয়ায় মুঠোফোনে ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে জীবনবৃত্তান্ত পাঠাতে বলেন।
চাকরির ক্ষেত্রে কোনো আর্থিক লেনদেন করতে হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ওই নারী বলেন, ‘আগে আপনি সিভি পাঠান, টাকা-পয়সার বিষয়ে আপনাকে বলা হয়নি।’
পরে সিভি পাঠালে অবশ্য আর কেউ যোগাযোগ করেননি। আর নিজে থেকে কল করলেও কেউ আর ফোন ধরেননি।
এদিকে গ্রামীণফোন জানিয়েছে, তাদের ‘গ্রামীণফোন ফোর-জি টাওয়ার সার্ভিস’ নামে কোনো উদ্যোগ নেই। কাজেই এই চাকরির বিজ্ঞপ্তি ভুয়া।
বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটরটির জনসংযোগ শাখার প্রধান তালাত কামাল বলেন, ‘আমাদের নাম, লোগো ব্যবহার করে প্রতারক চক্রগুলো এ ধরনের কাজ করে আসছে। গ্রামীণফোন নিজেদের ওয়েবসাইটে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে থাকে। এভাবে আমরা কখনো কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিই না।’
‘বিভিন্ন সময়ে এমন খবর আমরা পাই। অনেককেই এমন চাকরির প্রলোভন দেখানো হয়, টাকা নেয়া হয়। বিষয়গুলো জানার পরে আমরা ব্যবস্থা নেই।’ বলেন তালাত কামাল।



সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল হাজারী।   ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: গোলাম কিবরীয়া হাজারী বিটু্।   প্রকাশক: মোঃ ইব্রাহিম পাটোয়ারী।
সহ সম্পাদক- রুবেল হাসান: ০১৮৩২৯৯২৪১২।  বার্তা সম্পাদক : জসীম উদ্দিন : ০১৭২৪১২৭৫১৬।  সার্কুলেশন ম্যানেজার : আরিফ হোসেন জয়, মোবাইল ঃ ০১৮৪০০৯৮৫২১।  রিপোর্টার: ইফাত হোসেন চৌধুরী: ০১৬৭৭১৫০২৮৭।  রিপোর্টার: নাসির উদ্দিন হাজারী পিটু: ০১৯৭৮৭৬৯৭৪৭।  মফস্বল সম্পাদক: রাসেল: মোবা:০১৭১১০৩২২৪৭   প্রকাশক কর্তৃক ফ্ল্যাট নং- এস-১, জেএমসি টাওয়ার, বাড়ি নং-১৮, রোড নং-১৩ (নতুন), সোবহানবাগ, ধানমন্ডি, ঢাকা থেকে প্রকাশিত এবং সিটি প্রেস, ইত্তেফাক ভবন, ১/আর কে মিশন রোড, ঢাকা-১২০৩ থেকে মুদ্রিত।  বার্তা, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ০২-৪১০২০০৬৪।  ই-মেইল : [email protected], web : www.hazarikapratidin.com
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি