শুক্রবার, ২৯ মার্চ, 2০২4
হাজারীর আত্মজীবনী (পর্ব-১১৬)
Published : Wednesday, 17 May, 2017 at 4:57 PM, Update: 28.03.2019 7:24:18 PM

মহিউদ্দিনের ঘরে নির্মেলেন্দু গুণসহ কজনের অবস্থান মহসীন হলে জুয়ার আসরে গোলযোগ
আওয়ামী লীগ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করলেও সংসদ অধিবেশন ডাকা নিয়ে টালবাহানা শুরু হলো। ১৯৭১ সালে ১ মার্চ সংসদ অধিবেশন বসার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্থে তাও বাতিল করা হয়। অবশেষে বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে মহাসমাবেশ আহ্বান করেন। সেখানে তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দিয়ে বললেন, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। সেই সঙ্গে শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন। সে সময় ঢাকায় এলেই ফকিরাপুলে মহিউদ্দিনের ঘরে থাকতাম। ছাগলনাইয়ার মহিউদ্দিন এখন অবজারভারে চাকরি করে। অবজারভার অফিসের অদূরে মহিউদ্দিন একটি ঘর ভাড়া করে থাকত। অসহযোগ আন্দোলনের সময় ছাত্রদেরকে ছাত্রবাস থেকে বের করে দেওয়া হয়। তাই অনুবাদক আক্তারুন্নবী, কবি নির্মেলেন্দু গুণ, কবি সাজ্জাদ কবির, ডাক্তার আবুল কাশেমসহ সবাই এসে উঠলো মহিউদ্দিনের ঘরে। এখানে তখন সবই একসাথে মেঝেতে থাকতাম। ঘরের দরজাটি সবসময় খোলাই থাকত। যে যখনই আসত শার্টটা খুলে শুয়ে যেত। এখানে আসার আগে আমরা মহসীন হলের পাঁচতলায় নবীর রুমে থাকতাম। একদিন হঠাৎ গুণসহ অন্য কবিরা প্লাস খেলছিল। কতক্ষণ খেলা দেখে আমিও তাদের সাথে খেলতে বসি। এভাবে কদিন খেলার পর তারা আর পয়সার অভাবে খেলতে পারে না। কবিতা লিখে টুকটাক যা পেত সবই আমি নিয়ে নিলাম। এই অবস্থায় গুণ বলল, আর ভাই তোমার তো ভাগ্য ভালো চল পাশের রুমে এনএসএফের পাণ্ডারা প্লাস খেলে, ওরা আমাদেরকে ফতুর করে দিয়েছে। ওর কথায় খুশি হয়ে রাজি হলাম। পরিকল্পনা মোতাবেক পরদিন রাতে আমরা তিন জন ওদের কক্ষে গেলাম। খেলা শুরু হলো। ঘন্টাখানেকের মধ্যে ওদের টাকা শেষ হয়ে গেল। একপর্যায়ে ওদের একজন আমার কাছে টাকা হাওলাদ চাইলে, আমি দিতে রাজি হলাম না। কিছুক্ষণ পরে ক্ষিপ্ত হয়ে একলাফে গিয়ে তার স্যুটকেস থেকে একটি ছোরা বের করল। আমি কিছুটা বিপদ আঁচ করতে পেরে হঠাৎ করে পেছনের দিকে হাত নিয়ে বিকট শব্দে চিৎকার করে বলি, এক পা এগোলে ঝাঁঝরা করে ফেলব। শব্দটি এত বিকট ছিল যে ওই রুমে বাকি দুজনেই হতবাক হয়ে গেল। পাশের রুম থেকেও দু-একজন বেরিয়ে এলো। তারপর সেখান থেকে সোজা মহিউদ্দিনের ঘরে। আর কোনোদিন মহসীন হলের দিক যাইনি। গুণ পরে মহিউদ্দিনের ঘরে এসে আমাকে বাহবা দিল। তবে ওরা গুণ আর নবীকে খুব অপমানজনক কথাবার্তা বলেছে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছে, ব্রিজ খেলায় মাথা খাটাতে হয়। তবে প্লাস খেলতে কিছুটা টেকনিক লাগে, কিন্তু আমি এর সঙ্গে একমত নই। কেননা কি টেকনিক লাগে আমি তা ঠিক বুঝিতে পারি না। আমার ধারণা টেকনিক বলতে যদি কিছু চুরি করাকে বুঝানো হয় সেটা ভিন্ন কথা। প্লাস খেলতে মনের দৃঢ়তা থাকা প্রয়োজন। মানসিকভাবে দুর্বল থাকলে এ খেলায় জেতার সম্ভাবনা খুব কম। আসলে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো জীবনের বেশকিছু সময় নষ্ট করেছি তাস খেলায়। ওই বিশাল সময়গুলো যদি লেখার কাজে ব্যবহার করতাম তবে খুবই ভালো হতো। অবশ্য মাঝেমধ্যে সুন্দরভাবে সময় কাঁটানোর জন্য তাস খেলার প্রয়োজন ছিল। মস্তিস্ক অলস থাকলে নাকি শয়তানের বাসা হয়। সেই বিবেচনায় তাস খেলতে গিয়ে মস্তিস্ক ব্যস্ত থাকায় তা শয়তানের বাসা হতে পারেনি। গুণ তার স্মৃতিকথায় এই ঘটনাটিও লিপিবদ্ধ করেছে।



সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল হাজারী।   ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: গোলাম কিবরীয়া হাজারী বিটু্।   প্রকাশক: মোঃ ইব্রাহিম পাটোয়ারী।
সহ সম্পাদক- রুবেল হাসান: ০১৮৩২৯৯২৪১২।  বার্তা সম্পাদক : জসীম উদ্দিন : ০১৭২৪১২৭৫১৬।  সার্কুলেশন ম্যানেজার : আরিফ হোসেন জয়, মোবাইল ঃ ০১৮৪০০৯৮৫২১।  রিপোর্টার: ইফাত হোসেন চৌধুরী: ০১৬৭৭১৫০২৮৭।  রিপোর্টার: নাসির উদ্দিন হাজারী পিটু: ০১৯৭৮৭৬৯৭৪৭।  মফস্বল সম্পাদক: রাসেল: মোবা:০১৭১১০৩২২৪৭   প্রকাশক কর্তৃক ফ্ল্যাট নং- এস-১, জেএমসি টাওয়ার, বাড়ি নং-১৮, রোড নং-১৩ (নতুন), সোবহানবাগ, ধানমন্ডি, ঢাকা থেকে প্রকাশিত এবং সিটি প্রেস, ইত্তেফাক ভবন, ১/আর কে মিশন রোড, ঢাকা-১২০৩ থেকে মুদ্রিত।  বার্তা, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ০২-৪১০২০০৬৪।  ই-মেইল : [email protected], web : www.hazarikapratidin.com
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি