শিরোনাম: |
হাজারীর আত্মজীবনী (পর্ব-১১৩)
|
স্মৃতিরক্ষার জন্য স্ত্রী-সন্তান কী জরুরি?
ছেলেমেয়ে না থাকলে নাকি মৃত্যুর সময় দুঃখ হয়। কিন্তু ছেলেমেয়ে না থাকলেও আমার মনে হয় দুঃখ থাকবে না, যদি এই জীবন কথা প্রকাশ করতে পারি। এটাই হবে আমার ভবিষ্যতের পরিচিতি, পুত্র-কন্যার সমান। আরও একটা উচ্চ বিলাসী স্বপ্ন ছিল। যেমন বিজয় সিং দিঘীর ও রাজাজীর দিঘীর উপরে উত্তর দক্ষিণে হাজারী রোডের লেকের উপর দিয়ে সিঙ্গাপুর ও দার্জিলিং এর মতো ক্যাবল কার প্রতিষ্ঠা করা। এটি রাজাজীর দীঘি কিংবা বিজয় সিং দীঘির মাঝখানে করার চিন্তা ছিল মাথায়। সকল উত্থান-পতন, ভাঙ্গা-গড়ার পরও সামগ্রিক বিবেচনায় নিজেকে একজন ভাগ্যবান পুরুষ মনে করি। কখনো কোনো চরম দুঃখবোধ আমাকে আচ্ছন্ন করতে পারেনি। নির্মেলেন্দু গুণ এক সংবর্ধনা সভায় বলেছিলেন, জয়নাল হাজারী কবিদের কবি। লেখালেখিতে থাকলে আমাদের থেকে অনেক বড় হতো। গাফফার চৌধুরী বলেছিলেন, হাজারীর কিছু কিছু বিশ্লেষণ আমাদের কাছে অসাধারণ মনে হয়েছে। দল থেকে বহিষ্কারের পরে হাজারী যে প্রতিক্রিয়াটি লিখিতভাবে দিয়েছিল সেটি এক অসাধারণ রচনা। দক্ষিণপন্থী কলামিস্ট হারুনুর রশিদ ইনকিলাবে লিখেছিল, হাজারী রাজনীতিতে না গেলে বড় লেখক হতে পারত। কেউ কেউ বলেছে, জজ ব্যারিস্টার হতে পারতাম। আমি বলি, পিতার কাছে হঠাৎ করে যদি কিছু টাকা না আসতো আর যদি ঘরের কাছে স্কুল কলেজ না থাকলে তাহলে রিক্সাওয়ালা বা দিনমজুর হতাম। পথে মামার সাথে দেখা না হলে আব্বা যদি মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিতেন তাহলে বড় মাওলানা হতাম কিনা জানি না। রাজাকার হওয়ার তো সম্ভবনা ছিলই। সেই বিবেচনা আমি নিজেকে খুবই সুখী মনে করি। আমরা বঙ্গবন্ধুর কালে এদেশে স্বাধীকার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম এবং বঙ্গবন্ধুর বক্ষে বক্ষ মিলিয়েছিলাম, সেইতো পরম পাওয়া। আমি যদি রবি ঠাকুরের সাথে কথা বলতে পারতাম নিশ্চয়ই সেটাও হতো সৌভাগ্যের বিষয়। আজ কেউ শত চেষ্টা করেও বঙ্গবন্ধুকে পাবে না। আমার জীবন পরিপূর্ণ এবং সার্থক। কেননা আমি মুক্তিযুদ্ধকালীন যুবক ছিলাম এবং মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম। মুক্তিযুদ্ধকালে আমি যদি শিশু কিংবা বৃদ্ধ থাকতাম তাহলে তো মুক্তিয্ুেদ্ধ যেতে পারতাম না। জজ ব্যারিস্টার কিংবা কবি-সাহিত্যিক হলাম না বলে দুঃখ করি না। রাজনীতিতে অনেক সাধনা করেও মন্ত্রিত্বের আসনটি পাইনি বলে সামান্যতম দুঃখবোধ আমাকে কাতর করেনি। সকল দুঃখকে চেপে এক সুখের সাগরে আমি ভেসে যাই ভাবি আমি স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক এবং এই স্বাধীনতা যুদ্ধ করে আমি জয়ী হয়েছি। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা, এটাই আমার সবচাইতে বড় গৌরবের বিষয়। মুক্তিযোদ্ধারা যদি দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান হয় তাহলে আমিতো এ দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান। এর বেশিকিছু চাওয়ার আছে বলে আমার মনে হয় না। তাই আমি কবির কন্ঠে বলি “ মৃত্যু উজ্জ্বল সমুদ্র পেরিয়ে জীবনের দিন খুঁজে পেয়েছি।” সব শেষে বলি, “সার্থক জন্ম আমার জন্মেছি এই দেশে- সার্থক জনম আমার মরব আজ-ই মুক্তিযোদ্ধার বেশে।” |