শিরোনাম: |
হাজারীর আত্মজীবনী (পর্ব-১০৮)
|
অলাতলির সংঘর্ষে হতাহত, চরইঞ্জিমানে ডাকাত নিহত ব্যাংকে বুলেট, আমার বিরুদ্ধে মামলা
![]() বিএনপির সন্ত্রাসীরা তাদের ওপর গুলি চালাতে থাকে। সে দিন সকাল ৮ টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ চলে। এর মাঝখানে পড়ে চার বছরের শিশু ইসমাইল ও আরও দুটি কিশোর বালক নিহত হয়। এরা কোনো দলের ছিল না। সুতরাং এদেরকে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করেছে বলে মনে হয় না। এই ঘটনার তাৎক্ষণিক কোনো মামলা হয়নি। কয়েকদিন পর এই ঘটনায় চারটি মামলা হয়। এর তিনটাতেই আমাকে জড়িত করা হয়। এই মামলায় ৪২৬ জনকে আসামি করা হয়েছিল। আমাকে আসামি করার পর পরই হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করি। বিচারপতি আজগার খাঁন এবং বিচারপতি আলতাফ হোসেন খানের গঠিত বেঞ্চ পুলিশকে গ্রেপ্তার কিংবা কোনো প্রকার হয়রানি করতে পারবে না এবং আমাকে চার সপ্তাহের মধ্যে নিম্ন আদালতে হাজির হয়ে জামিনের জন্য আবেদন করতে বলা হয়। আমার পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট বাসেত মজুমদার অতিষ্ট হয়ে গ্রামবাসী প্রতিরোধের প্রস্তুতি গ্রহণ করে। অলাতলির ঘটনার কিছুদিন পরেই সোনাগাজীর চরইঞ্জিমানে ডাকতরা চড়াও হলে গ্রামবাসীরা প্রথমে তাদের নৌকা ডুবিয়ে দেয়। এতে ডাকাতরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। চতুর্দিক থেকে জনতার আক্রমণে দিক-বিদিক ছুটতে থাকে। অধিকাংশই নদীতে ঝাঁপ দেয়। স্থলভাগে ৩ জন গণপিটুনিতে মৃত্যুবরণ করে। অপর ডাকাতরা নদীর পানিতে তলিয়ে যায়। পরদিন মোট ৭ জনের লাশ নদীতে ভেসে ওঠে। তাদের লাশ সোনাগাজী শহরে নিয়ে যাওয়া হয়। সকাল ৭ টায় লাশ দেখতে তৎকালীন ডিসি সোলায়মান চৌধুরী সেখানে যায়। ঘটনার বিস্তারিক শুনে সোলায়মান চৌধুরী অসংখ্য মানুষের সামনে মন্তব্য করেন, এরা তো ডাকাত। নইলে রাত ৩টার সময় নৌকা করে কেন তারা সেখানে গেল? এই ঘটনায় চারটি মামলা হয়। এর তিনটাতেই আমাকে আসামী করা হয়। এর মূল নথিতে সোলায়মান চৌধুরীর একটি নোট অন্তর্ভুক্ত আছে বলে আমাকে লিয়াকত মাস্টার জানিয়েছে। এই মামলায় লিয়াকত মাস্টার ছাড়াও আরজুকে আসামি করা হয়েছিল। শুনেছি এক পর্যায়ে, বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে ১০৪টি মামলা ছিল। তার মধ্যে একটি ছিল ছাতা চুরির মামলা। মনে হয় সেই ধারা মতেই অলাতলির একটি গরু চুরির মামলাতে আমাকে আসামি করা হয়েছে। সুতরাং পাঠক নিশ্চয় বিবেচনা করতে পারবেন এইগুলি ষড়যন্ত্র মূলক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত কিনা? এরপর ১৭ আগস্ট পুলিশ, বিডিআর আমার বাড়ির আশেপাশে অভিযান চালায়। সেদিন থেকেই দীর্ঘ সময়ের জন্য সেখানে কারফিউ জারি করা হয়। এই অভিযানকালের মামলা হাইকোর্টে আনার পর মামলাসমূহ পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট বসির, অ্যাডভোকেট এনায়েত ও অ্যাডভোকেট ওয়াজিউল্লাহ। মামলাগুলোতে আমাকে হুকুমের আসামি করা হয়েছে। এতটি মামলা শুধু সাধারণ কিছু লুটপাটের বিবারণ আছে। সুতরাং ওই মামলা আমাকে জড়িত হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। আমার ধারণা একজন অতি সাধারণ পাঠকও সহজেই বুঝতে পারবেন রাজনৈতিক উদ্দেশপ্রনোদিত হয়ে বিএনপির লোকরা আক্রাম হোসেনের প্রত্যক্ষ মদদে ওই মামলাগুলো দায়ের করে। বর্তমানে মহামান্য হাইকোর্ট ওই সকল মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে দিয়েছেন। ওই মামলায় ৭ স্কুল শিক্ষককেও জড়িত করা হয়েছিল। তারা হলেন দরবেশের হাট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আবুল বাসার ,সিন্দুরপুর খাজা আহম্মেদ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক হুমায়ুন কবির, রঘুনাথপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী শিক্ষক আবদুর রহমান। এরপর সোনাগাজীর চরইঞ্জিমানে ডাকাতি করতে গিয়ে ৭ জন ডাকাত নিহত হয়। চরইঞ্জিমান একটি গ্রাম, এটি সোনাগাজীর স্থলভাগ থেকে নদীর দ্বারা বিচ্ছিন্ন এবং কোম্পানিগঞ্জের সাথে যুক্ত, এই গ্রামটিকে সোনাগাজীর সঙ্গে কেন রাখা হয়েছিল তা বলা মুশকিল। একদিন গভীর রাতে সোনাগাজী অঞ্চল থেকে কিছু ডাকাত চরইঞ্জিমানে চড়াও হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরাকার আসার পর থেকে, এই ডাকাত দলটি বারবার চরইঞ্জিমানে হামলা চালায়। এই দলটির দ্বারা কয়েকটি নারী নির্যাতনের ঘটনাও ঘটে। আমি বাড়িতে ছিলাম না। ওই সময় আমার বাড়িতে অবৈধ অস্ত্রসহ অনেক অবৈধ মালামাল পাওয়া গেছে বলে অভিযোগ । এখানেও জননিরাপত্তা আইনে একটি মামলা এবং অবৈধ অস্ত্রের জন্য একটি মামলা, সমবায় ব্যাংকে একটি বুলেট পাওয়ার জন্য মামলা এবং পরে অন্য একটি মামলা হয়েছে। আপাতত এইসব মামলার বিস্তারিত আলোচনায় গিয়ে শুধু বলা যায়, যেহেতু আমি ছিলাম না, আমার কাছে অবৈধ কিছু পাওয়া যায়নি। জননিরাপত্তা আইনের মামলা তো হতেই পারে না, কেন না সেখানে কোনো গোলযোগ হয়নি। গোলযোগ ছাড়া কার্ফু দিয়েই তারা প্রমাণ করেছে, গোপনে কিছু অপকর্ম করেছে। আমাকে পেলেই নিশ্চই তারা হত্যা করত এবং এই হত্যাকাণ্ডের পরেই যাতে কেউ প্রতিবাদ প্রতিরোধ করতে না পারে সে জন্য এই কারফিউ দেয়া হয়েছিল। কারফিউ ফলে কোনো মানুষই সেখানে যেতে পারেনি। তাই সেখানে কি ছিল? কি ঘটেছিল? তা কেউ জানতে পারল না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমি যদি অভিযানের কথা আগেই জেনে গেলাম, তাহলে অবৈধ অস্ত্রগুলো সেখানে রেখে দিলাম কেন? সব চাইতে বড় কথা তখনকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান তার স্মৃতি কথায় আমার বাড়ির যে অস্ত্র পাওয়ার বিবরণ দিয়েছেন সেটি ছিল খুবই নগণ্য। অথচ মামলার বিবরণীতে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র দেখানো হয়েছে। তার চাইতেও বড় কথা, যেহেতু আমি ছিলাম না। সুতরাং আমার কাছে কিছুই পায়নি। অতএব আমার কাছে অস্ত্র পাওয়ার বিষয়টি অমূলক। নিজেরা অস্ত্র দিয়ে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছে। অভিযানের সময় আমার বাড়িতে ১২ হাজার বই ও দেশ-বিদেশ থেকে নিয়ে আসা কিছু শিল্পকর্ম ছিল, যা এখন পাওয়া দুস্কর। মনে হয় বাংলাদেশে কোন রাজনৈতিক নেতার বাড়িতে এত বিশাল পুস্তক সম্ভার ছিল না। একই সময় সমবায় ব্যাংকের একটি কক্ষ থেকে একটি বুলেট উদ্ধারের কথা বলা হয়েছে এবং এই ব্যাপারে একটি মামলা হয়েছে। আমি সমবায় ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলাম। এখানে আমার জন্য কোনো আলাদা চেম্বার ছিল না। তাছাড়া ওই ভবন আমার ব্যক্তিগত মালিকানাধীন ছিল না। সেখানকার হলরুমে আমরা কমিটি সভা করতাম। তবে শুনেছি তিন তলায় আমাদের ভাড়া দেয়া একটি কক্ষে ওই বুলেট পাওয়া গিয়েছিল। সমবায় ব্যাংকে আমি বিভিন্ন কমিটি সভা ছাড়া যেতাম না। সুতরাং সমবায় ব্যাংকে আমাকে জড়িত করা হলো কেন? অভিযান চলকালে যে সকল কর্মকর্তা,কর্মচারী উপস্থিত ছিল, তাদের কাউকে আসামি না করে আমাকে আসামি করা হলো কেন? এতে এই মামলায় আমি একজনই আসামি, সুতরাং এইটি সকলের কাছে তামাশা মনে হয়। অপারেশন ক্লিনহার্টের সময় বিচারপতি মাহফুজ রহমানের বাড়িতে সামরিক বাহিনী বেশ কিছু অস্ত্র পেয়েছিল। এই ব্যাপারে তিনি বলেছিলেন আমার বাড়িতে অস্ত্র পেলেই যে আমারই হবে এর কোনো যুক্তি নেই। অন্য কেউ শত্রুতা করেও আমার বাড়িতে রাখতে পারে। বিচারপতির বাড়িতে তার উপস্থিতিতে অস্ত্র উদ্ধারের পরও যদি তার বিরুদ্ধে মামলা না হয়। তাহলে আমার অনুপস্থিতিতে কেউ শত্রুতা করে অস্ত্র রাখলে আমার বিরুদ্ধে মামলা হবে কেন? তিনি মহামান্য বিচারপতি এটা সত্য, আমিওতো তিনবারের সংসদ সদস্য, একটি কলেজের চেয়ারম্যান ও সমবায় ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলাম। এই প্রসঙ্গে আমি উল্লেখ করতে চাই, আমাদের সংবিধানে দ্বিতীয় ভাগের ২৭ নং অনুচ্ছেদে পরিষ্কার বলা হয়েছে, সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী। সুতরাং আমার জন্য এক প্রকার এবং বিচারপতির মাহফুজুর রহমানের ব্যাপারে আইনের প্রয়োগ ভিন্ন রকম হলে নিশ্চয় সংবিধান লঙ্ঘন করা হবে। |