শিরোনাম: |
ফেনী পাসপোর্ট অফিসে বছরে ১০ কোটি টাকার ঘুষবাণিজ্য : ‘রেজিস্ট্রার্ড ৫০ দালাল এজেন্ট’!
|
![]() সাইনবোর্ড দেখে বাইরে থেকে মনে হবে স্টুডিও, কম্পিউটার বা ফটোকপির দোকান, কিন্তু ভেতরে ‘ব্যবসা’ ভিন্ন। ফেনীতে এভাবেই সাইনবোর্ডের আড়ালে চলে পাসপোর্ট নিয়ে জাল-জালিয়াতির কারবার। ভুয়া সিল-প্যাড ব্যবহার করে তৈরি হয় যাবতীয় নকল কাগজপত্র। হাত বাড়ালেই মেলে পাসপোর্ট। শহরের একাধিক ৫০টি ট্রাভেল এজেন্ট ও খোদ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সামনের দোকানঘর ঘিরেই তৎপর পাসপোর্ট দালাল চক্রের সদস্যরা। সরজমিন গত ৬ মাসের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। অনুসন্ধানে জানা যায়, ফেনীর প্রায় ৫০জন চিহ্নিত দালাল নিজেদের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের রেজিস্ট্রার্ড এজেন্ট বলে পরিচয় দেয়। বেশির ভাগ পাসপোর্ট প্রত্যাশী ই-পাসপোর্টের ফরম পূরণ করতে গিয়ে এই দালালদের ফাঁদে পড়ছেন। ফরম পূরণ শেষ হলেই দ্রুততম সময়ে পাসপোর্ট করার অফার দেয় তারা। চুক্তি না হলে বিড়ম্বনার শিকার হবেন বলে জানায় দাললরা। পাসপোর্টসংক্রান্ত বিভিন্ন কাজের জন্য টাকার অংক ভিন্ন। যেমন - সিরিয়াল ছাড়া আবেদন জমা করতে ৫ থেকে ১৫ হাজার, পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়া পাসপোর্ট পেতে ১৫ থেকে ২০ হাজার, নামের বানান সংশোধনে সর্বনিন্ম ৩০ হাজার এবং জন্মতারিখ সংশোধন ও নামপরিবর্তন বা ভুয়া নাম-ঠিকানায় জাল পাসপোর্ট তৈরি, আঙুলের ছাপ জালিয়াতি (মিস ফিঙ্গারিং) ইত্যাদি কাজ বাবদ ৩০ হাজার থেকে ১ লাখ পর্যন্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন সূত্র বলছে, ফেনী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসকে কেন্দ্র করে শুধুমাত্র দালালদের মাধ্যমে বছরে প্রায় ১০ কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্য হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দালাল জানায়, অফিসে তাদের লোক আছে। পাসপোর্ট সংক্রান্ত সমস্যা শুনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে তারা ফোন দেয়। সবুজ সংকেত পাওয়ার পর তারা কাজ হাতে নেয়। ফেনী পাসপোর্ট অফিসের দালালদের আশ্রয় ও প্রশ্রয়দানের বিষয়ে কথা হয় শহরের একাদিক ট্রাভেল এজেন্টের সাথে কথা বলে তিনি বলেন, অনলাইনে পাসপোর্টের ফরম পূরণ করা হয়। ফরর্মের উপর ৫০টি এজেন্টের সিল দেওয়া হয়। সিল থাকলে তারা বলে দিতে পারের এটি তাদের তালিকার সিল। প্রতিদিন বিকালে আনসার সদস্য করিম তালিকা দরে টাকা আদায় করে নিয়ে যায়। করিম টাকা উত্তলন করে অফিসের দায়িত্ব রত হিসাব রক্ষক আবুল মনসুর, অফিস সহকারী মাফতুল হোসেন ও ডাটা এন্ট্রি কন্টোলার অপারেটর মোঃ সাইফুল লতিফকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। তাদের মাধ্যমে টাকা অফিসের কর্মকর্তাদের যোগ্যতা অনুসারে টাকার হিস্যা অনুপাতে বন্টন করা হয়। গত মার্চ মাসে ফেনী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে হয়রানীর শিকার হয়ে এক দল গ্রাহক ফেনী পৌর সভার মেয়র ও ফেনী পৌর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজির কাছে অভিযোগ করলে তিনি তাৎক্ষনিক ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করে অভিযোগের সত্যতা পান। এ সময় ফেনী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে অপেক্ষাকৃত শত শত গ্রাহক মেয়রকে ঘিরে রেখে তাদের হয়রানির কথা জানান। এ বিষয়ে ফেনী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা সাধন সাহা বলেন, দালাল নির্মূলে অফিসের পক্ষ থেকে সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে। এজন্য জেলা পুলিশের সহায়তায় মাঝেমধ্যেই ভ্রাম্যমাণ আদালত চালানো হয়। আগের তুলনায় বর্তমানে কিছুটা হলেও দালালদের দৌরাত্ম্য কমেছে। নাম প্রকাশ না করার শত্বে একদিক অফিস সূত্র বলছে, বর্তমানে ফেনীর পুরো সিন্ডিকেট নেটওয়ার্কটির দায়িত্ব পালন করছেন ফেনী অফিসের হিসাব রক্ষক আবুল মনসুর, অফিস সহকারী মাফতুল হোসেন ও ডাটা এন্ট্রি কন্টোলার অপারেটর মোঃ সাইফুল লতিফ । কয়েক লাখ মানুষকে অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে এই চক্রটি প্রতারিত করে আসছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পাসপোর্ট অফিসের উপপরিচালক সাধন সাহা বলেন পাসপোর্ট অফিসে ঘুষ বাণিজ্যর কথা অস্বীকার করেন এবং দালালদের দৌরাত্ম্যের কথা শিকার করে যুগান্তরকে বলেন, আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করেছি আশা করি শিগগিরই এর কার্যকর সমাধানে আমরা যেতে পারব। |