শুক্রবার, ২৯ মার্চ, 2০২4
আমার বাবা রাজাকার নয়, শান্তি কমিটির সদস্য- শামসুদ্দিন কালু
Published : Wednesday, 13 April, 2022 at 9:52 PM

বিশেষ প্রতিনিধিঃ
 ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দেশ যেন কোনোভাবেই স্বাধীন না হয় সেজন্য স্বাধীনতা বিরোধী চক্র পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীকে সাহায্য করতে শান্তি কমিটি গঠন করে।
একই দেশের সবাই বাসিন্দা হলেও দেশ মাতৃকার টানে কেউ জীবন যৌবন সঁপে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়েছেন । আর একটি পক্ষ পাকিস্তানের অখন্ডতা বজায় রাখতে পাকবাহিনির সাথে হাতে হাত মিলিয়ে বিভিন্ন সংগঠন,কমিটি যেমন—আলবদর, আলশামস, রাজাকার, নাগরিক শান্তি কমিটি (শান্তি কমিটি); এর সাথে যুক্ত হয়েছে। কখনো কখনো এরা নিজেরাই স্বজাতি নিধনে প্রবৃত্ত হয়েছে। স্বাধীনতা আন্দেলনের সমর্থক বা এর প্রতি সহানুভূতিশীল লোকজনের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। লুটপাটে মত্ত হয়েছে। কিশোর তরুণী যুবতী মেয়েদের ভোগের জন্য পাকবাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছে। সুযোগ বুঝে নিজেরাও এমন অপকর্মে লিপ্ত হয়েছে। পবিত্র ধর্মের নামে, অখন্ড পাকিস্তানকে রক্ষার নামে হেন কু-কর্ম পাপাচার নেই যা তারা করেনি বা করতে সচেষ্ট হয়নি। প্রথমত ঢাকায় শান্তি কমিটি গঠিত হয়। ১৪০জন সদস্য বিশিষ্ট সদস্য নিয়ে “পূর্ব পাকিস্তান শান্তি ও কল্যাণ কাউন্সিল” নামে নাম করণ করা হয়। এ কাউন্সিলের প্রধান হন ফরিদ আহমদ এবং সাধারণ সম্পাদকের দায?িত্বে ছিলেন পি.ডি.পি নেতা নূরুজ্জামান। সদস্যদের মধ্যে ছিলেন মওলানা আবদুল মান্নান, জুলমত আলী খান, গোলাম আযম, মাহমুদ আলী, ইউসুফ আলী চৌধুরী(মোহন মিয়া), সৈয়দ আজিজুল হক (নান্না মিয়া), পীর মোহসেন উদ্দিন(দুদু মিয়া), রাজা ত্রিদিব রায়, এ.এস.এম সোলায়মান।
পরবর্তীতে ক্রমান্বয়ে সারা দেশে শান্তি কমিটি গঠিত হয়। তাতে চট্রগ্রাম বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলার মোঘল মিয়া আর সেক্রেটারী নোয়াখালী জেলার মুনীর। এ দুই জনের নেতৃত্বে গড়ে উঠে বিভিন্ন থানা ও ইউনিয়ন কমিটি। সমাজের প্রভাবশালী স্বাধীনতা বিরোধী লোকদের নিয়ে এসব কমিটি গঠন করে মুক্তিযুদ্ধের সময় বিভিন্ন ভাবে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সহযোগিতা করাই ছিল তাদের প্রধান কাজ। একইভাবে গড়ে উঠে তৎকালীন লাকসাম থানার আওতাধীন নাঙ্গলকোট ইউনিয়ন কমিটি(বর্তমান নাঙ্গলকোট উপজেলা সদর)। আর এ ইউনিয়ন কমিটির প্রভাবশালী সদস্য ছিল হাজী আকবর আলী , পিতা-মৃত তোরাব আলী। যুদ্ধকালীন সময়ে হাজী আকবর আলী’র নেতৃত্বে অত্যাচার, রাহাজানি, হত্যা ধর্ষণ, নীরিহ মানুষ ও হিন্দুদের জমি দখলসহ বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাক্তার কলিমুল্লাহকেও হত্যা করে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাক-বাহিনীর আত্মসমর্পণের সঙ্গে সঙ্গে শান্তি কমিটির বিলুপ্তি ঘটলে ১৯৭২ সালে কোলাবরেটরস স্পোশাল ট্রাই: মামলা হয় । যাহার নং- ১৭৭/৭২, জিআর- ২১৩/৭২, লাকসাম থানার মামলা নং -১৮, তাং-১৭/০২/৭২, ধারা-৩৬৪/৩০২,১০৯,১১৪/৩৮ দ: বি: তৎসহ আর্টিক্যাল ১১(এ) (ব) অব প্রেসিডেন্ট অর্ডার নং ৮/৭২, উক্ত মামলায় প্রধান আসামী নাঙ্গলকোট শান্তি কমিটির প্রভাবশালী সদস্য হাজী আকবর আলী, পিতা- মৃত তোরাব আলী, সাং-নাঙ্গলকোট । তার সাথে আরো যারা আসামী হয়েছেন তারা হলেন, আঃ কাদির, পিতা-মৃত ইউসুব আলী, আঃ মান্নান, পিতা- বাদশা মিয়া, আ: মান্নান,পিতা-আঃ কাদের, দেলোয়ার হোসেন, পিতা-মৃত রৌশন আলী, সর্ব সাং- হেছাখাল, মোঃ বজির উল্লা, পিতা-মৃত আজগর আলী, সাং-দৌলতপুর, সিরাজুল ইসরাম মাষ্টার, পিতা-মৃত হাসান আলী, সাং-হরিপুর ও শামসুল হক, সর্ব থানা- লাকসাম (বর্তমান নাঙ্গলকোট) কুমিল্লা। সেই মামলায় লাকসাম থানা পুলিশ হাজী আকবর আলীকে  গ্রেফতার করে কোমরে রশি ও হ্যান্ডকাপ লাগিয়ে থানায় নিয়ে যায়। সেই মামলায় ১২০দিন জেল খেটে জামিনে আসে।
১৯৭৫ সালে ১৫ই আগষ্ট মারা যাওয়ার পরে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসে এবং দালাল আইন জারি করে। সেই আইনের প্রেক্ষাপটে পরবর্তীতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা আর সম্ভব হয়নি।  স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নির্বাচন পূর্ববতী সময়ে নির্বাচনী ইশতেহার ছিল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বে সরকার গঠন হলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে। যেমন অঙ্গীকার তেমন কাজ। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। এখন দাবী উঠছে রাজাকার আলবদর ও শান্তি কমিটির সেই সব যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা প্রকাশ করে তাদের বিচারের এবং যারা মৃত্যূ বরণ করেছে তাদের মরণোত্তর বিচারের। এনিয়ে নাঙ্গলকোটের বিভিন্ন সভা সেমিনারে  আলোচনা সমালোচনা চলছে। সম্প্রতি  আবুল কাশেম হৃদয় কর্তৃক প্রকাশিত যুদ্ধাপরাধ(কুমিল্লা, ব্রাহ্মনবাড়িয়া, চাঁদপুর) দলিলপত্র “ অপারেশন কিল এন্ড বার্ণ” বইয়ে নাঙ্গলকোটের হাজী আকবর আলী’র নাম স্পষ্টাক্ষরে। যুদ্ধাপরাধী শান্তি কমিটির এ প্রভাবশালী সদস্যের নাম নিয়ে সাধারণ মানুষের জানার অনেক কৌতূহল, কে তিনি যুদ্ধাপরাধী ও শান্তি কমিটির সদস্য এ  ”হাজী আকবর আলী”?
এনিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হলে "যুদ্ধাপরাধী ও শান্তি কমিটির সদস্য" ”হাজী আকবর আলীর সন্তান সাবেক দু'বারের ইউপি চেয়ারম্যান ও পৌরসভা মেয়র, নাঙ্গলকোট উপজেলা পরিষদের টানা দু-দুবারসহ বর্তমান চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন কালু সাংবাদ সম্মেলন করেন। সাংবাদ সম্মেলনে বলেন- আমার বাবা শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন, রাজাকার ছিলেন না।
আরও খবর


সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল হাজারী।   ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: গোলাম কিবরীয়া হাজারী বিটু্।   প্রকাশক: মোঃ ইব্রাহিম পাটোয়ারী।
সহ সম্পাদক- রুবেল হাসান: ০১৮৩২৯৯২৪১২।  বার্তা সম্পাদক : জসীম উদ্দিন : ০১৭২৪১২৭৫১৬।  সার্কুলেশন ম্যানেজার : আরিফ হোসেন জয়, মোবাইল ঃ ০১৮৪০০৯৮৫২১।  রিপোর্টার: ইফাত হোসেন চৌধুরী: ০১৬৭৭১৫০২৮৭।  রিপোর্টার: নাসির উদ্দিন হাজারী পিটু: ০১৯৭৮৭৬৯৭৪৭।  মফস্বল সম্পাদক: রাসেল: মোবা:০১৭১১০৩২২৪৭   প্রকাশক কর্তৃক ফ্ল্যাট নং- এস-১, জেএমসি টাওয়ার, বাড়ি নং-১৮, রোড নং-১৩ (নতুন), সোবহানবাগ, ধানমন্ডি, ঢাকা থেকে প্রকাশিত এবং সিটি প্রেস, ইত্তেফাক ভবন, ১/আর কে মিশন রোড, ঢাকা-১২০৩ থেকে মুদ্রিত।  বার্তা, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ০২-৪১০২০০৬৪।  ই-মেইল : [email protected], web : www.hazarikapratidin.com
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি