শিরোনাম: |
পহেলা বৈশাখের তাগাদা অসাম্প্রদায়িকতার লক্ষ্যে পৌঁছা
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী
|
বুধবার পহেলা বৈশাখ, বাংলা ১৪২৮ সনের শুরু। ভাবছিলাম, আমার পাঠকদের নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের লেখাটি লিখব। কিন্তু সকালে ঘুম থেকে উঠে যে খবরটি পেলাম তা হৃদয়বিদারক। অবশ্য কভিড-১৯-এর কল্যাণে রোজই বাংলাদেশ থেকে এত বন্ধুবান্ধবের মৃত্যুর খবর পাই যে শোক আর বুকে তেমন জাগে না। মৃত্যুর খবর পেতে মন অভ্যস্ত হয়ে গেছে। কিন্তু এই অভ্যস্ত হওয়া সত্ত্বেও আজকের মৃত্যুর খবরটি আমার বুক ভেঙে দিয়েছে। ১৪২৭ সাল শেষ হবে এবং নতুন বছর আসবে এমন শোকের খবর নিয়ে তা কল্পনাও করিনি। বিখ্যাত রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী মিতা হকের অকালপ্রয়াণ আমাকে আত্মীয় বিয়োগের ব্যথা দিয়েছে।
মিতা হক গত রবিবার করোনা রোগে হাসপাতালে মারা গেছে। সে ছিল আমার বন্ধুকন্যা; কিন্তু আমার কাছে ছিল নিজের কন্যা। তার বাবা রেজাউল হক ছিলেন সাংবাদিক এবং আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তার বড় ভাই রবীন্দ্রসংগীত বিশেষজ্ঞ এবং ছায়ানটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত ওয়াহিদুল হকও ছিলেন আমার বন্ধু ও সহপাঠী। বলতে গেলে মিতা হকের সমগ্র পরিবারটিই একটি রবীন্দ্র ঘরানার পরিবার। তার চাচা ওয়াহিদুল হকের কথা আগেই বলেছি। চাচি সন্জীদা খাতুন ছায়ানটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালিকা। নিজেও রবীন্দ্রসংগীতের শিল্পী ও শিক্ষক। ওয়াহিদুল ও সন্জীদার ছেলে এবং ছেলের বউ লিসাও রবীন্দ্রসংগীতের বিখ্যাত শিল্পী। মিতার মেয়ে জয়িতাও রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী। মিতা লন্ডনে এলেই আমার বাসায় ছুটে আসত। বলত, চাচা, আপনার পছন্দের রবীন্দ্রনাথের গানের কথা বলেন, আমি আপনাকে শোনাব। তারপর একটানা গান গাইত। অনেকেই তো রবীন্দ্রনাথের গান গেয়ে থাকেন। তাঁদের সুরেলা কণ্ঠও আছে। কিন্তু মিতার কণ্ঠে সুর আর হৃদয়ের আবেগের এমন যোগ ঘটেছিল যে রবীন্দ্রনাথ আজ বেঁচে থেকে মিতার কণ্ঠে তাঁর গান শুনলে মিতাকে বুকে টেনে নিতেন। মিতার বাবা রেজাউল হকের ডাকনাম ছিল বাচ্চু। তারও অকালমৃত্যু হয়। তার মৃত্যুতে আমি তাকে নিয়ে একটি স্মৃতিকথা লিখেছিলাম ঢাকার এক দৈনিকে। মিতা এরপর গান গাওয়ার আমন্ত্রণ পেয়ে লন্ডনে এসেছিল। পূর্ব লন্ডনের ব্রাডি সেন্টারে গানের আসর। মিতা মঞ্চে এসে আমাকে শ্রোতাদের আসনে দেখে বলে উঠল, চাচা, আপনি বাবার ওপর যে লেখাটি লিখেছেন, তা মা কেটে বাঁধিয়ে তাঁর শোয়ার ঘরের দেয়ালে টাঙিয়ে রেখেছেন। শধষবৎশধহঃযড়কিছুদিন আগে টেলিফোনে কথা হচ্ছিল। মিতা আমার কিডনির অসুখের খবর শুনে বলল, ‘চাচা, সাবধান। আমি কিডনির অসুখে ডায়ালিসিস করছি।’ আমার ধারণা, এই কিডনির রোগেই তার মৃত্যু হয়েছে। করোনা তাতে সহায়তা জুগিয়েছে মাত্র। করোনা শুধু আমাকে নয়, বহু মানুষকেই বহু মৃত্যুর শোক সহ্য করতে বাধ্য করেছে। মিতাকে হারানোর গভীর শোকও আমাকে সহ্য করতে হবে। কিন্তু তার কণ্ঠের গান ও স্মৃতি, যে কদিন বেঁচে আছি আমার মনে উজ্জ্বল হয়ে থাকবে। মিতার স্মৃতির প্রতি আমার অশেষ সম্মান, অশেষ ভালোবাসা। লিখতে বসেছিলাম বাংলা নববর্ষ ১৪২৮ সনের আগমন উপলক্ষে আমার পাঠকদের আগাম শুভেচ্ছা জানাতে। কিন্তু একটি মৃত্যুর খবর পেয়ে লেখাটি শোকগাথা দিয়ে শুরু করতে হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ নতুন বছরকে আবাহন করতে গিয়ে লিখেছিলেন, ‘হেথা হতে যাও পুরাতন।’ আমিও কবিগুরুর সুরে সুর মিলিয়ে বলি, ১৪২৭ সনের দুঃখ-কষ্ট-মৃত্যুশোক যতই কষ্টের হোক তাকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে নতুন আশা-উদ্দীপনার মধ্যে আবাহন জানাতে হবে। পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে নববর্ষের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। আমিও কালের কণ্ঠ’র পাঠকদেরও সেই অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি তার আগমনের এক দিন আগেই। আজ যে সূর্য অস্ত যাবে, সে আর উদিত হবে না। উদিত হবে নতুন বছরের সূর্য। পহেলা বৈশাখ এমনিতেই বাঙালির জীবনে একটি জাতীয় উৎসবের দিন। ধর্মীয় উৎসবের দিন নয়। ঈদ ও পূজা ধর্মীয় উৎসব। নববর্ষ, নবান্ন, বসন্ত ও শারদোৎসব প্রভৃতি জাতীয় উৎসব। হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সবার মিলিত উৎসব। পরে কয়েকটি অসাম্প্রদায়িক দিবসও যুক্ত হয় বাঙালির জীবনে। যেমন—একুশের ভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস প্রভৃতি। ভাষা দিবস দীর্ঘকাল অসাম্প্রদায়িকভাবে পালিত হয়েছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর কোনো কোনো মহল এই দিবস পালনে ধর্মের রং লাগানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। সে যা-ই হোক, পহেলা বৈশাখের নববর্ষের দিনটি আমাদের জীবনে এখনো একটি অমলিন অসাম্প্রদায়িক জাতীয় দিবসরূপে রয়ে গেছে। পাকিস্তান আমলে বাংলা নববর্ষের দিনটি ‘হিন্দুদের উৎসবের দিন’ হিসেবে চিহ্নিত করে এই দিবস পালন ধর্মবিরোধী বলে প্রচার চালানো হয়েছিল। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের হানাদাররা বাংলাদেশে গণহত্যা শুরু করার পর তাদের তাঁবেদার রাজনৈতিক নেতা খুলনার আবদুস সবুর খান ঢাকা টেলিভিশনে উপস্থিত হয়ে বাংলা নববর্ষ পালনকে ইসলামবিরোধী ঘোষণা করেছিলেন। মুক্তিযোদ্ধারা ইসলামের এই বিকৃত ব্যাখ্যা উপেক্ষা করে মুক্তাঞ্চলে সে বছর নববর্ষ উৎসব পালন করেছিলেন। শুধু নববর্ষ উৎসব নয়, নবান্ন, বসন্ত, শারদ ইত্যাদি বাঙালির সর্বজনীন উৎসব সেই পাকিস্তান আমলেই হিন্দু-মুসলমানের মিলিত উৎসব হিসেবে পালিত হতে শুরু করে। প্রতিবছর পহেলা বৈশাখে বাঙালিরা সত্য সত্যই প্রকৃত বাঙালি হয়ে ওঠে। এই দিন পায়জামা (অথবা ধুতি), পাঞ্জাবিসহ গায়ে চাদর ঝুলিয়ে সবাই বাঙালি হয়। এই দিন অনেকে পান্তা ভাত, ভাজা ইলিশ, কাঁচা মরিচ ও নানা শাক-সবজির আয়োজন করে উৎসবে পরিবেশনের জন্য। নাচ-গানও হয় অনেক স্থানে। রবীন্দ্রসংগীতে দুই বাংলার আকাশ-বাতাস ভরে ওঠে। পাকিস্তান হওয়ার পর বাংলাদেশে পহেলা বৈশাখ শুধু উৎসব নয়, বাঙালি জাতীয়তাবাদের বাহন হয়ে ওঠে। এ জন্য ফজলুল হকের অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির কাছেও আমরা ঋণী। ১৯৫৪ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক নির্বাচনে জিতে প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি গভর্নরের কাছে শপথ গ্রহণ করতে গিয়ে দাবি করেন, তিনি শপথনামায় বাংলায় সই করবেন। তখন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ছিলেন চৌধুরী খালেকুজ্জামান। পশ্চিম পাকিস্তানের বিখ্যাত রাজনৈতিক নেতা। তিনি ফজলুল হককে বললেন, ‘হক সাহেব, আপনি বাংলায় সই করতে পারেন না। বাংলা পাকিস্তানের সরকারি ভাষা নয়।’ ফজলুল হক বললেন, আমি পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষায় সই করছি। তাতে কোনো বাধা নেই। তিনি বাংলায়ই নাম সই করেছিলেন। গভর্নরের আপত্তি মানেননি। ফজলুল হকের রাজনীতি যতই বিতর্কমূলক হোক, তাঁর অসাম্প্রদায়িক মনোভাব ও ভূমিকা বাঙালি জাতীয়তাবাদকে গোড়ায় শক্তি সঞ্চয়ে সাহায্য করেছে। এ কথা অস্বীকার করা যাবে না। তিনি মুখ্যমন্ত্রী হয়েই পহেলা বৈশাখকে সরকারি ছুটির দিন করেন এবং বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উন্নয়নের জন্য বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। পাকিস্তানের তৎকালীন মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় সরকার তাঁর দুটি কাজেই বাধা দিলে তিনি বলেন, “ইরানের মুসলমানরা ঢাকঢোল পিটিয়ে তাদের ‘নওরোজ’ (নববর্ষ) পালন করলে যদি তাদের মুসলমানিত্বের হানি না হয়, তাহলে বাঙালি মুসলমান তাদের নববর্ষ পালন করলে তাদের মুসলমানিত্বের হানি হবে কেন?” বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠার ঘোষণা সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন, মুসলিম লীগ সরকার যদি পশ্চিম পাকিস্তানে ‘বাবায়ে উর্দু’ আবদুল হকের নেতৃত্বে উর্দু একাডেমি প্রতিষ্ঠা করে লাখ লাখ টাকা খরচ করতে পারে, তাহলে পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষা বাংলার উন্নয়নের জন্য পূর্ব পাকিস্তানে বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে না কেন? তিনি পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী নূরুল আমিন তাঁর সরকারি বাসভবন হিসেবে যে বর্ধমান হাউসে বাস করতেন, সেই বাড়িতে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিজে বাস না করে তাতে বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন। ফজলুল হক মুসলিম লীগের সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করলেও তাঁর মৌলিক রাজনৈতিক চিন্তা-ভাবনা ছিল অসাম্প্রদায়িক। তিনি অবিভক্ত বাংলায় প্রথম যে রাজনৈতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন তা ছিল অসাম্প্রদায়িক। সংগঠনটির নাম ছিল নিখিল বঙ্গ কৃষক প্রজা পার্টি। পরে নাম একটু পরিবর্তন করে করেছিলেন কৃষক শ্রমিক পার্টি। লক্ষণীয় ব্যাপার এই যে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী দলগুলো নিয়ে জাতীয় মোর্চা গঠন করতে গিয়ে তার নাম রেখেছিলেন বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল)। ফজলুল হক নিজের অজান্তেই অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতীয়তাবাদের স্ফুরণ ঘটালেও শেখ মুজিব সচেতনভাবে তাকে পূর্ণরূপে দিয়েছিলেন। অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতীয়তাবাদকে তিনি শুধু আদর্শ হিসেবে নয়, একটি স্বাধীন দেশের সাংবিধানিক ভিত্তি হিসেবেও প্রতিষ্ঠা দিয়েছেন। অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতীয়তাবাদের যদি আত্মপ্রতিষ্ঠার একটি শক্ত সাংস্কৃতিক ভিত্তি না থাকত, তাহলে তাঁর রাজনৈতিক ভিত্তিটি স্থায়ী হওয়ার সুযোগ পেত না। চর্যাপদ থেকে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ ও শামসুর রাহমান পর্যন্ত বিস্তৃত হাজার বছরের অসাম্প্রদায়িক শিল্প-সাহিত্য, আউল-বাউল লালনদের গান ও কবিতাই ছিল বাংলা সংস্কৃতির ভিত্তি। এই সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদই বাঙালির রাজনৈতিক জাতীয়তাবাদকে শক্তি জুগিয়েছে। সাম্প্রদায়িক পাকিস্তান আন্দোলন এই অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতীয়তাবাদ থেকে বাঙালি মুসলমানের মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। সাময়িকভাবে তাতে সফল হয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাঙালি মুসলমান, বিশেষ করে তার তরুণসমাজ পাকিস্তানের মধ্যযুগীয় সামন্তবাদী, আধিপত্যবাদী কুৎসিত চেহারাটা দেখতে পায়। নিজেদের ভাষা-সংস্কৃতির দিকে আবার তারা মুখ ফেরায়। নিজেদের অসাম্প্রদায়িক জাতিগত স্বাতন্ত্র্য ও স্বাধীনতা লাভের জন্য তারা রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ দাশকে আশ্রয় করেন। সংগ্রামের হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করেন ভাষা ও সংস্কৃতিকে। এদিক থেকে বামপন্থী রাজনৈতিক আন্দোলন তাঁকে যথেষ্ট সাহায্য জোগায়। বায়ান্নর ভাষা সংগ্রাম পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি তরুণ প্রজন্মের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের প্রথম পদক্ষেপ। এদিক থেকে তখনকার দুজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের নাম উল্লেখ না করলেই নয়। তাঁরা হলেন কবি শামসুর রাহমান, অন্যজন রবীন্দ্রসংগীত বিশেষজ্ঞ ওয়াহিদুল হক। শামসুর রাহমান তাঁর কবিতা থেকে চাপিয়ে দেওয়া উর্দু, ফারসি শব্দ বর্জন করে বাংলা ভাষার অসাম্প্রদায়িক চরিত্র ফিরিয়ে আনার জন্য যুদ্ধ করেন। এ যুদ্ধ অনেকটা ফারসি ভাষার আদি চরিত্র রক্ষার জন্য মহাকবি ফেরদৌসীর যুদ্ধের মতো। অন্যদিকে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে যে সংগ্রামী তরুণ ব্যক্তিত্বরা আবির্ভূত হন, তাঁদের একটি দল রবীন্দ্রসংগীতকে কেন্দ্র করে নব সাংস্কৃতিক রেনেসাঁর আন্দোলন শুরু করে। এই আন্দোলনের চরিত্র ছিল সম্পূর্ণ অসাম্প্রদায়িক। রবীন্দ্রসংগীতকেন্দ্রিক এই আন্দোলন থেকেই তৈরি হয় ছায়ানট প্রতিষ্ঠান। কা-ারি আরো অনেকের সঙ্গে ওয়াহিদুল হক (সদ্যঃপ্রয়াত মিতা হক তাঁরই ছাত্রী এবং ভ্রাতুষ্পুত্রী) এবং তাঁর স্ত্রী সন্জীদা খাতুন। ছায়ানট ভেঙে ফেলার জন্য পাকিস্তানি আমলের শাসক আইয়ুব-মোনেম খাঁ অনেক চেষ্টা করেছেন, পারেননি। রমনার বটতলা থেকে উঠে এসে ছায়ানটের এখন বিশাল ভবন। ছাত্র-ছাত্রীও অসংখ্য। ছায়ানট পূর্ব পাকিস্তানের তরুণ মুসলমান প্রজন্মকে বাংলা নববর্ষ, নবান্ন, শারদ উৎসবের দিকে টেনে আনে। এ জন্য বহু সংগ্রাম তাদের করতে হয়। বাঙালি মুসলিম তরুণসমাজ মূলত ছায়ানটের আন্দোলনের ফলে বুঝতে পারে বাঙালির জাতীয় উৎসবগুলো এবং হাজার বছরের বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি বাঙালি হিন্দুর একার সম্পত্তি নয়। বাঙালি হিন্দু-মুসলমানের যৌথ সম্পত্তি। গঙ্গা-তিস্তার পানিতে যেমন দুই বাংলার অধিকার, তেমনি বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতেও দুই বাংলার সমান মালিকানা। আজ ১৪২৮ সন শুরু হওয়ার আগের দিনে অর্থাৎ আরেকটি নববর্ষ উৎসব পালনের আগের দিনটিতে এই লেখাটি লিখতে বসে মনে হচ্ছে একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর সহযোদ্ধারা যে আত্মদান করে গেছেন, তা ব্যর্থ হয়নি। অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতীয়তাকে স্থায়িত্ব দানের জন্য যে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক যুদ্ধ চলমান রয়েছে তা পরাজিত হয়নি, কিছুটা পশ্চাৎপদ হয়েছে মাত্র। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের মনে এই উপলব্ধিটি জাগ্রত রয়েছে, এই যুদ্ধে পরাজিত হলে তাদের অস্তিত্ব থাকবে না। এই উপলব্ধি থেকেই রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উভয় ফ্রন্টেই অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার সংগ্রামকে অবশ্যই জয়যুক্ত করতে হবে। আগামীকালের নববর্ষের দিনও বাংলাদেশের মানুষ মাত্রকেই সেই তাগাদাই দিচ্ছে। শুভ নববর্ষ। আমার পাঠকদের আবারও সেই শুভেচ্ছা জানাই। |