শিরোনাম: |
সানির খুনিদের মৃত্যুদণ্ড দেখার প্রতিক্ষায় বাবা
|
![]() রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ছাত্রমৈত্রীর নেতা রেজওয়ানুল ইসলাম চৌধুরী সানি হত্যা মামলার রায় ঘোষণা হয়েছে আট বছর আগে। কিন্তু এখনও রায় কার্যকর হয়নি। সানির খুনিদের মৃত্যুদ- কার্যকর দেখার প্রতিক্ষায় দিন গুনছেন তার বাবা মনোয়ার-উল-ইসলাম চৌধুরী নান্নু। সানি রাজশাহী পলিটেকনিক ছাত্রমৈত্রীর সহসভাপতি ছিলেন। ২০১০ সালের ৭ জানুয়ারি প্রকাশ্যেই ক্যাম্পাসে নির্মমভাবে কুপিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। বিএনপি ও ছাত্রশিবির থেকে ছাত্রলীগে আসা কিছু নেতাকর্মী এ হত্যাকা- ঘটায়। এ হামলায় হাতের চারটি আঙ্গুল হারিয়েছেন ছাত্রমৈত্রীর পলিটেকনিক শাখার তৎকালীন সভাপতি এবং বর্তমানে কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী আবদুল মোতালেব জুয়েল। গুরুতর আহত হন আরেক নেতা সারাফাত আলী বুলবুল। তাদের বাঁচাতে গেলে পুলিশের দুই সদস্যও আহত হন। এদের মধ্যে একজনের হাতের একটি আঙ্গুলও কাটা পড়ে। এ ঘটনায় সানির বাবা মনোয়ার-উল-ইসলাম চৌধুরী নান্নু থানায় হত্যা মামলা করেন। তিন মাসের মধ্যে এই মামলায় ১৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এরপর ২০১২ সালের ১৬ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। ছাত্রলীগের পলিটেকনিক শাখার বহিষ্কৃত সভাপতি নিজাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম তুষারকে মৃত্যুদ-ের আদেশ দেন আদালত। এছাড়া ছাত্রলীগ কর্মী ওহিদুজ্জামান বাবু, মেজবাউর রহিম সুমন, খালেছুর রহমান রোকন, জাহিদুল ইসলাম ও কৌসিকুর রহমান অনিককে যাবজ্জীবন এবং উজ্জল, মাসুম ও আব্দুল মতিনকে ১০ বছর কারাদ- দেয়া হয়। আর খালাস পান তিনজন। সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে তুষার ছাড়া সবাই গ্রেপ্তার হন। তারা নি¤œ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপীল করেন। গত বছরের জানুয়ারিতে দেয়া রায়ে উচ্চ আদালত দুইজনের ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন। বহাল থাকে অন্য সাতজনেরও দ-। শুধু নি¤œ আদালতে যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া রোকনের সাজা কমিয়ে ১০ বছর কারাদ- দেন উচ্চ আদালত। আসামিদের মধ্যে ওহিদুজ্জামান বাবু জামিনে এসে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। পলাতক তুষার ছাড়া সাজাপ্রাপ্ত অন্যরা উচ্চ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধেও আপিল করেছেন। সানি যখন নির্মমভাবে খুন হন তখন তার বাবা নগরীর মতিহার থানা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে তিনি মতিহার থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। তার মা শামীমা মনোয়ার সে সময় থেকে এখনও মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। গত ৭ জানুয়ারি সানির ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে। সেদিনই হত্যাকা-টি নিয়ে সানির বাবা নান্নুর সঙ্গে কথা হয়েছে। রায় কার্যকর না হওয়ায় তিনি হতাশা প্রকাশ করেছেন। নান্নু বলেন, পলিটেকনিক ছাত্রলীগের সভাপতি হয়ে ওঠা নিজাম টিটিসিতে পড়াশোনা করার সময় ছাত্রশিবির করতেন। তৎকালীন অধ্যক্ষ জয়নাল আবেদিনের সব কুকর্মের সহায়তা করতেন নিজাম। পরে যখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসে তখন ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ সক্রিয় হয়। আর তখনই অধ্যক্ষ এই নিজাম ও তার সঙ্গের ক্যাডারদের ছাত্রলীগে ঢুকিয়ে দেন। নিজাম ছাত্রশিবির নেতা থেকে হয়ে যান ছাত্রলীগের সভাপতি। রায় কার্যকর করতে দীর্ঘসূত্রিতার পেছনে অস্বাভাবিক কোনো কারণ আছে কি না, এমন প্রশ্নে নান্নু বলেন, ‘সে রকম অস্বাভাবিক মনে হয় না। দেশে মামলাজট আছে। এটা হতে পারে। কিন্তু কিছু কিছু বিষয় দ্রুত সমাধান করা উচিত। এটা সত্য যে নি¤œ আদালতে মামলার যে গতি ছিল সেটা এখন নেই।’ সানির বাবার চোখ ভিজে ওঠে। পানি মুখে বললেন, ‘আমরা তো আসলে প্রতিটা দিন অপেক্ষা করি। যেই দুজনের মৃত্যুদ- দিয়েছেন আদালত, তাদের শুধু ফাঁসির কাষ্ঠে দেখতে চাই। কিন্তু একজন তো এখনও গ্রেপ্তার হয়নি। এটা হতাশাজনক, দুঃখজনক।’ নান্নু জানান, সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের পক্ষ থেকে তার কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয় যেন তিনি টাকা নিয়ে একটা মীমাংসা করে নেন। দুই মাস আগেও নিজামের পক্ষ থেকে এমন প্রস্তাব এসেছে। কিন্তু তিনি নাকচ করেছেন। তারপর আর কেউ আসেনি। নান্নু বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগ করি। আমার স্ত্রী মহিলা লীগ করেন। সেই দল ক্ষমতায়। আমাদের অভিভাবক লিটন ভাই (সিটি মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন)। বাদশা ভাইও (সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা) আমাদের অভিভাবক। তারা আমার পাশে আছেন। লিটন ভাই তার বাড়িতে আমাকে কথা দিয়ে বলেছেন, তিনি আমার সঙ্গে আছেন। তিনি তার কথা রেখেছেন। তবে দ্রুত রায় বাস্তবায়নের জন্য যদি আরও কারও কাছে যেতে হয় আমি যাব। প্রয়োজনে আইনমন্ত্রীর কাছে যাব। |